কৌশলে সম্পত্তি লিখে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিলেন ২ ছেলে
চাঁপাইনবাবগঞ্জে কৌশলে বাবা-মায়ের থেকে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই ছেলের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানার পর সন্তানদের জমি ফেরতের অনুরোধ করলে মানসিক ভারসাম্যহীন বাবা ও মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন ওই দুই ছেলে। উপায় না পেয়ে গত সোমবার (২ জানুয়ারি) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী বাবা-মা।
ঘটনাটি ঘটেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার টিকরামপুরে। ভুক্তভোগীরা হলেন ৯০ বছর বয়সী হামেসা বেগম ও তার মানসিক ভারসাম্যহীন স্বামী ফহিমুদ্দিন। এই দম্পতির চার ছেলে ও দুই মেয়ে। সবার বাড়ি একই এলাকায় হলেও তারা আলাদা জায়গায় বাড়ি করে থাকেন। অভিযুক্ত বড় ছেলে মো. আলিমুদ্দীন ও ছোট ছেলে আব্দুর রাকিব কৌশলে বাবা-মার থেকে সম্পত্তি হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ বাবা-মায়ের।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু ও শেখ হাসিনা সেতুর সংযোগ সড়কের জন্য সরকারি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়ার কথা বলে বাবা-মাকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে স্বাক্ষর নেন মো. আলিমুদ্দীন ও আব্দুর রাকিব। বিষয়টি কিছুদিন পর জেনে জমি ফেরতের অনুরোধ করলেও ছেলেরা না শুনে বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন। এরপর নিজের ভিটা ছেড়ে মেজ ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। ইতোমধ্যে থানায় লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন।
তাদের অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় এই দম্পতি ৫৪ দশমিক ৬৬ শতক জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে আসছিলেন। সেই জমির কিছু অংশ সরকার অধিগ্রহণ করেছে জানিয়ে ক্ষতিপূরণের টাকার কথা বলে গত ২৩ নভেম্বর বৃদ্ধ বাবা-মাকে সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যান দুই ছেলে মো. আলিমুদ্দীন ও আব্দুর রাকিব। সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে নতুন দলিল তৈরি করে প্রতারণার মাধ্যমে তাদের স্থাবর-অস্থাবর লিখে নেন তারা। গত ২ ডিসেম্বর দুই ছেলের প্রতারণার বিষয়টি জানতে পারেন ওই বৃদ্ধ দম্পতি। এরপর সম্পত্তি ফেরত চাইলে রেজিস্ট্রি হয়ে গেছে আর ফেরত দেওয়া যাবে না বলে জানান ছেলেরা। পরে জমির বিষয় নিয়ে বাকবিতন্ডা হওয়ায় বৃদ্ধ বাবা-মাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন তারা।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বৃদ্ধ বয়সে থাকার একটু জমি না পেয়ে মেজো ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন তারা। দুই ছেলের এই প্রতারণা কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না অসুস্থ বৃদ্ধ মা-বাবা।
বৃদ্ধা হামেসা বেগম বলেন, আমার দুই সন্তান আলিমুদ্দীন ও আব্দুর রাকিব প্রতারণা করে আমাদের ৫৪ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছে। আমাদের থাকার জায়গাটুকুও নেই। আমরা এখন রাস্তার ফকির। জমি ফেরতের জন্য অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা কথা শুনছে না। এ জন্য থানায় অভিযোগ দিয়েছি। এখন বাধ্য হয়ে অন্য ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। অন্য সন্তানদের বঞ্চিত করে যাতে তারা (অভিযুক্তরা) যেন জমি ভোগদখল করতে না পারে, সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুর রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, জোর করে জমি লিখে নেয়নি। বাবা-মা স্বেচ্ছায় আমাদেরকে জমিজমাগুলো লিখে দিয়েছেন। বিষয়টি আমাদের একান্ত পারিবারিক বিষয়। আমরাই দেখব।
এদিকে অভিযুক্ত বড় ছেলে আলিমুদ্দীন বলেন, আমার বাবা-মা শেষ বয়সে আমাদের কাছে থাকতে চেয়েছিলেন। এজন্য স্বেচ্ছায় আমাদের দুই ভাইয়ের নামে জমি লিখে দিয়েছেন। এখন অন্য ভাই-বোনদের প্ররোচনায় আমার নামে থানায় অভিযোগ করেছেন। এমনকি বাবা-মাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার খবরও সত্য না।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) একেএম আলমগীর জাহান মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই ছেলের বিরুদ্ধে বৃদ্ধ মা-বাবার জমি লিখে নেওয়ার একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি সামাজিকভাবে সমাধানের চেষ্টা চলছে। সমাধান না হলে ভুক্তভোগী দেওয়ানি আদালতে মামলা করতে পারবেন।
জাহাঙ্গীর আলম/আরকে