দেখতে সুদর্শন, বেশভূষায় ভদ্রলোক ও মার্জিত আচরণ তাদের। কখনো ধর্ম ভাই কখনো বা মামা, কাকা অথবা অন্য সম্পর্ক তৈরি করে বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর সুযোগ বুঝে দল নিয়ে ডাকাতি করে লুটে নেয় সর্বস্ব।

এমনি এক ডাকাত দলের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর তাদের ডাকাতির ধরন সম্পর্কে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য জানান লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন। ২০২১ সালে নড়াইলের লোহাগড়ায় সৌদি প্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির দেড় বছর পর তাদের গ্রেপ্তারে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। শনিবার (৭ জানুয়ারি) ভোর রাত থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. ওয়াদুদ শেখ ছেলে ও দিঘলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদের ভাই আব্দুর নূর তুষার (২৩), আব্দুর রাজ্জাক শেখের ছেলে মো. সিজু ওরফে সাজ্জাত (২৫) ও মো. মিজানুর রহমানের ছেলে মো. জসিম খান (২৩)। গ্রেপ্তারকৃত তিন ডাকাত সদস্যের বাড়ি লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়নের নোয়াগ্রাম গ্রামে। 

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লোহাগড়া উপজেলার কালনা গ্রামে ২০২১ সালের ১৫ জুন দিবাগত রাতে সৌদি প্রবাসী পলাশ মুন্সির বাড়িতে পাঁচ থেকে ছয় জনের একটি ডাকাত দল গেটের তালা ভেঙে প্রবেশ করে। এসময় দেশীয় অস্ত্রের মুখে পলাশের স্ত্রী ও বোনেকে জিম্মি করে থেকে নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার, দুটি মোবাইলসহ দেড় লক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। ডাকাতি কালে পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করে শারীরিক ভাবে যখম করে। ভুক্তভোগীদের চিৎকারে আশপাশের প্রতিবেশীরা ছুটে আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়।

ওই ডাকাত দলের সদস্যরা জেলার বিভিন্নস্থানে চুরি ডাকাতির একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছে। এদের প্রধান টার্গেট জেলার প্রবাসীদের বাড়িগুলো। তারা ডাকাতির আগে দীর্ঘদিন ধরে যেকোনো পরিবারের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলে পরে সুযোগ বুঝে তারা সব লুটে নেয়। ডাকাতির পর এরা ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। অনেক সময় এরা প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ায় অনেকে মামলা করতে ও ভয় পায়। 

লোহাগড়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসির উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রবাসীর স্ত্রীর মামলার সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ডাকাতির পর তুষার আত্নগোপনে ভারতে ছিল আট নয় মাসের মতো। জেলার বিভিন্ন থানায় তার নামে একাধিক ডাকাতি মামলা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ডাকাতির কথা স্বীকার করেছে। মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। তাদেরকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সুপার (এসপি) সাদিরা খাতুন মুঠোফোনে ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ডাকাত দলের সদস্যদের ডাকাতির ধরন টা একটু ভিন্ন। তারা টার্গেট স্থির করে যে কোনো অজুহাতে পরিবারিক একটা সম্পর্ক স্থাপন করে। ডাকাতি পর অধিকাংশ ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন পারিবারিক অশান্তির কথা চিন্তা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়। আপনাদের সকলের প্রতি আহ্বান, আপনারা অপরিচিত লোকদের সম্পর্কে তথ্য নিশ্চিত হয়ে কাজে নিযুক্ত করুন বা পারিবারিক সম্পর্কে আবদ্ধ হোন। ইতোমধ্যে গত ৬ জানুয়ারি আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৩ সদস্য গ্রেপ্তার করেছি। নড়াইলে সংগঠিত সব ধরনের অপরাধমূলক ঘটনা প্রতিরোধে জেলা পুলিশ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে। আপনারা তথ্য দিয়ে সার্বিক সহোযোগিতা করুন।

সজিব রহমান/আরকে