মাদারীপুরে সম্পত্তির ভাগ পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিজ মায়ের পরিবর্তে সৎ মায়ের নাম ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে মো. হাশেম কাজী নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। নিজের মায়ের নামে তেমন কোনো সম্পত্তি না থাকায় সৎ মায়ের সম্পত্তির ভাগ নিতে এমনটি করেছেন বলে জানান ভুক্তভোগীর পরিবার। 

স্থানীয় ও জাতীয় পরিচয়পত্র সূত্রে জানা যায়, মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের মধ্যচক গ্রামের বাসিন্দা মো. হাশেম কাজী (৮০) সৈয়দ আলী কাজীর দ্বিতীয় পক্ষের ছেলে। সৎ ভাইদের সঙ্গে জমির ভাগ নিতে নিজ মায়ের নামের স্থলে সৎ মায়ের নাম ব্যবহার করেছেন তিনি। হাশেম কাজীর জাতীয় পরিচয়পত্রে তার মা মৃত মেহেরজান বিবির নামের স্থলে সৎ মা ছটু বিবির নাম দেওয়া হয়েছে। নাম ব্যবহার নিয়ে কোনো বিতর্ক না হলেও এখন সৎ মায়ের সম্পত্তিতে ভাগ বসানোয় তৈরি হয়েছে বাকবিতণ্ডা। সৈয়দ আলী কাজী তার প্রথম স্ত্রী ছটু বিবির মৃত্যুর পর তার মৃত বড় ভাই কুব্বাস কাজীর স্ত্রী মেহেরজান বিবিকে দ্বিতীয় স্ত্রীর হিসেবে বিয়ে করেন। সেই ঘরে জন্ম হয় হাশেম কাজীর। হাশেম কাজীর জন্মের কয়েক বছর পরে তার মা মেহেরজান বিবি বিয়ে করেন একই গ্রামের খোরশেদ বেপারীকে। সেই ঘরে জন্ম নেয় ইউনুস বেপারী ও ইউসুফ বেপারীর। জাতীয় পরিচয়পত্রে ইউনুস বেপারী ও ইউসুফ বেপারী মায়ের নাম মেহেরজান বিবি লেখলেও মেহেরজান বিবির আগের ঘরের সন্তান হাশেম কাজী তার সৎ মা ছটু বিবির নাম দিয়েছেন। তিনি ছটু বিবিরি পৈতৃক সম্পত্তি ও রেকর্ডীয় সম্পত্তির ভাগ নিতে এমনটা করেছেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ নিয়ে বর্তমানে তাদের পরিবারে চলছে নানা বিতর্ক। ছটু বিবির সম্পত্তির ভাগও চান হাশেম কাজী। 

স্থানীয় শাহ আলম মিয়া বলেন, ভোটার আইডি কার্ডে নাম পরিবর্তনের কারণে এলাকায় ঝামেলা লেগেই থাকে। জমি যারা কিনেছে তারাও সমস্যায় আছে। প্রায়ই ঝামেলা মারামারির পর্যায়ে চলে যায়। শালিস মিমাংসা করতে গিয়েও সবাই ফিরে আসে। এ সমস্যার সমাধান প্রশাসন ছাড়া কেউ করতে পারবে না। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য দবির মালত বলেন, হাশেম কাজীর মায়ের নাম মেহেরজান বিবি। তার সৎ মায়ের নাম ছটু বিবি। মেহেরজান বিবির পরের ঘরের সন্তানরা কিন্তু ঠিকই মায়ের নাম মেহেরজান বিবি লিখেছেন। হাশেম কাজী কেন সৎ মায়ের নাম লিখল তা জানি না। তবে এটি সংশোধন করা জরুরি।

ভুক্তভোগী আমিনুল হক বলেন, তিনি হাশেম কাজীর ভাইদের কাছ থেকে ১১ শতাংশ জমি কিনেছেন অনেক আগে। রেকর্ড ও দলিল অনুযায়ী জমির কোনো সমস্যা নাই। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি নামের কারণে প্রায়ই হাশেম কাজী জমি ফেরত নিতে ঝামেলা করছে। এর একটি সমাধান প্রশাসনের কাছে চাচ্ছি। 

এ বিষয়ে কথা বলতে হাশেম কাজীকে বাড়িতে পাওয়া না যাওয়ায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে তার বড় ছেলে ফকির চান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দাদির নাম নিয়ে সমস্যা হলে জাতীয় পরিচয়পত্রে সেটা সমাধান করা যাবে। তার দাদার নামের সম্পত্তির ভাগতো তার বাবা পাবেই।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ কেউ দেয়নি। অভিযোগ দিলে নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সমস্যাটির সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে ভুক্তভোগীরা সিভিল কোর্টে মামলার মাধ্যমেও এর সমাধান পেতে পারে।

রাকিব হাসান/আরকে