পরিবারের হাল ধরতে তিন মাস আগে তুরস্কের উদ্দেশ্যে ইরানে যান সুনামগঞ্জের যুবক তানিল আহমেদ (২২)। গ্রামে ফুটবল খেলায় ভালো নাম ডাক ছিল তার। উন্নত জীবন পেতে দালালের মাধ্যমে ইরান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে তুরষ্ক যাওয়ার স্বপ্ন ছিল তানিলের। তুরষ্ক যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ অধরাই থেকে গেল তার। 

গত সোমবার (৯ জানুয়ারি) অবৈধ পথে ইরান পাড়ি দেওয়ার সময় তীব্র ঠান্ডায় ইরান-তুরস্ক সীমান্তে মৃত্যু হয়েছে তানিলের। তানিল সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম বীরগাঁও ইউনিয়নের ঠাকুরভোগ গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। এক বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তানিলের বাবা। 

গিয়াস উদ্দিন মারা যাওয়ার আগে ৩ মেয়ে ও ৪ ছেলে রেখে যান তিনি। যার মধ্যে তানিল ছিল সবার বড়। পরিবারের শেষ আশ্রয়স্থলকে হারিয়ে নির্বাক তানিলের পরিবার। বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তানিলের মা। এখন মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা চান তারা। 

তানিলের চাচা নুর মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, উন্নত জীবনের আশায় তিন মাস আগে দালালের মাধ্যমে ৭ লাখ টাকা চুক্তিতে প্রথমে ইরান যান তানিল। ইরান পৌঁছে দালালকে দেওয়া হয় ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা তুরস্ক পৌঁছে। তুরস্কে পৌঁছানোর জন্য এর আগে আরও দুই বার তাকে পাঠানো হয়। তবে তীব্র ঠান্ডায় দুই বার ব্যর্থ হয়ে অসুস্থ হয়ে যায় তানিল। এরপরও জোর করে তাকে মৃত্যুর মুখে ফেলেছে দালালরা। এখন আমাদের ছেলের মরদেহ আনতে আমাদের মন্ত্রী ও সরকারের সাহায্য চাই। 

এ ব্যাপারে শান্তিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তার পরিবারের কাছে গিয়েছি। গিয়ে যতটুকু জানলাম ইরানে সে বৈধ পথেই গিয়েছে। ইরান থেকে তুরস্ক যাওয়ার পথ অবৈধ ছিল। আমরা আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা দরকার করবো। তারা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করলে আইনের ভেতর থেকে যা যা করা লাগে সেটাও করবো। 

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুজ্জামান বলেন, এ বিষয়টি আমি শুধু অনলাইনে দেখেছি। নির্দিষ্ট করে পরিবার বা অন্য কেউ এখনো কিছু জানায়নি। সে যদি বৈধ পথে বিদেশ গিয়ে থাকে তাহলে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আমরা মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে পারি। যদি অবৈধ পথে যায় তাহলে আমাদের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। তারপরও সে কোন সীমান্তে মারা গেছে সেই দেশ শনাক্ত করে মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো। 

সোহানুর সোহানুর রহমান/আরএআর