তীব্র শীতে কাঁপছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়। একইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগ। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, জ্বর, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে প্রতিদিন শীতজনিত রোগীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে। এসব রোগীর মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।

হাসপাতালগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দি, জ্বরে আক্রান্ত হয়ে রোগীরা চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। অতিরিক্ত রোগীর কারণে বেড খালি না থাকায় অনেকেই মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরাও।

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলা সদর হাসপাতালে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। চলতি মাসের ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলা আধুনিক সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন ও নিয়েছেন ২১২ জন। এদের মধ্যে ১৭৩ জনই শিশু। বাকি ৩৯ জন নারী-পুরুষ। এছাড়া শ্বাসকষ্ট রোগী এসেছিলেন ১০১ জন, জ্বরে ৪২ জন। জেলার পাঁচ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও ঠান্ডাজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, সর্দি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট রোগীর পরিমাণ বেড়েছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, শীতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই শীতজনিত রোগ সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। শীতজনিত রোগে বেশি সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে পারলে কিছুটা হলেও সুরক্ষা মিলবে বলে পরামর্শ চিকিৎসকদের।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা সাহেরা খাতুন, আল্পনা আক্তার, সাবিনা খাতুন জানান, তাদের শিশু পাতলা পায়খানা থেকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ৩-৪ দিন ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এরকম কথা অনেকেরই।

তেঁতুলিয়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা.মাসুদ হাসান বলেন, এ বছর পঞ্চগড়ে প্রচন্ড শীত পড়েছে। তেঁতুলিয়ায় শীতের প্রকোপ আরও বেশি। এই শীতে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া এই ধরনের রোগ অনেক বেড়ে গেছে। তবে আমাদের হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া আমাদের হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধের সরবরাহ রয়েছে।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. রফিকুল হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। ফলে ঠান্ডাজনিত রোগে ভুগছেন অনেকেই। বাচ্চাদের ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, বয়স্কদের শ্বাসকষ্ট, সর্দি, কাশি, হাপানি এসব রোগের পাদুর্ভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সার্বিক দিক থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিশেষ করে গতবারের তুলনায় শীতজনিত রোগে মৃত্যুর হার নেই বললেই চলে। আমাদের সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা দিন-রাত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যালাইন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত আছে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের শীতে যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য কম্বলের ব্যবস্থা রয়েছে।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে। বিশেষ করে এ জেলা হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দুই পর্বতের সন্নিকটে হওয়ায় এখানে শীতের মাত্রা বেশি হয়ে থাকে। গত ৬ জানুয়ারি থেকে ৯ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে।

এমজেইউ