নতুন বছরের শুরুতে দেশের অন্যান্য জেলার মতোই বই উৎসবে মেতেছিল রংপুর বিভাগ। নতুন বইয়ের গন্ধে আনন্দে উচ্ছ্বসিত ছিল প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা। কিন্তু জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে এলেও এখনো চাহিদা অনুযায়ী রংপুর বিভাগে প্রাথমিকের সব বই পাওয়া যায়নি।

বই সংকটের কারণে বিভাগের আট জেলার মধ্যে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলায় বই বিতরণের শতভাগ লক্ষ্য এখনও পূরণ হয়নি। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, বিভাগের আট জেলার মধ্যে শুধুমাত্র পঞ্চগড়, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলায় শতভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে। বাকি পাঁচ জেলায় আজ ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চাহিদার প্রায় ৯০ ভাগ বই দেওয়া হয়েছে। শতভাগ লক্ষ্য পূরণে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার রামনগর এলাকার প্রাথমিকে পড়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তাদের অনেকের ছেলেমেয়ে এখনো বইয়ের পুরো সেট হাতে পায়নি। এ কারণে শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে যা পড়াচ্ছেন তা বাসায় পড়তে পারছেন না। এই সমস্যা শুধু রামনগরের শিক্ষার্থীদেরই নয়, জেলার বিভিন্ন উপজেলাতেও শতভাগ বই বিতরণ না হওয়ায় পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে দাবি অভিভাবকদের।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখনো বিনা মূল্যের সব বই পায়নি। এতে করে চরাঞ্চল বেষ্টিত এই উপজেলার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ সচেতন অভিভাবকদের। এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জরুরি ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ বই তুলে দেওয়ার দাবি সবার।

সেখানকার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চর উদনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলু মিয়া বলেন, আমরা শিক্ষা অফিসে বইয়ের চাহিদার কথা জানিয়েছি। এখনো পর্যাপ্ত সব বই পায়নি তাই নতুন বই সবাইকে দেওয়া সম্ভব হয়নি। সব বই না পাওয়ায় কিছু কিছু ছেলেমেয়ে ঠিকমতো ক্লাস করছে না।

গাইবান্ধার বেশ কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে বই বিতরণ প্রসঙ্গে কথা হয়। শিক্ষকরা জানান, তারা প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সব বই ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দিতে পেরেছেন। কিন্তু চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মাত্র দুটি করে বই দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ জানান, বই পেতে কিছুটা বিলম্ব হলেও দ্রুত সবার হাতে সব বই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। কেউ কেউ সব বই হাতে না পেলেও বিশেষ ব্যবস্থায় পড়াশোনা অব্যাহত রয়েছে। কাউকে কোনো সমস্যায় পড়তে হচ্ছে না।

তিনি আরও জানান, গত ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত চাহিদার ৮০ ভাগ বই গাইবান্ধায় এসেছে। ইতোমধ্যে এসব বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ ভাগ বই এলেই সবার হাতে দেওয়া সম্ভব হবে বলে জানান ওই শিক্ষা কর্মকর্তা।

বিভাগীয় উপপরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর বিভাগের আট জেলায় প্রাথমিকের মোট পাঠ্যবইয়ের চাহিদার সংখ্যা ১ কোটি ২৭ লাখ ৪৪ হাজার ৫০৬, অর্থাৎ ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬২ সেট বই। এর মধ্যে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত রংপুরে শতভাগ, ঠাকুরগাঁওয়ে ৯০ ভাগ, পঞ্চগড়ে শতভাগ, দিনাজপুরে ৯৫ ভাগ, নীলফামারীতে ৯১ ভাগ, লালমনিরহাটে শতভাগ, কুড়িগ্রামে ৮৭ ভাগ এবং গাইবান্ধা জেলায় ৮০ ভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা রংপুর বিভাগীয় উপপরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, প্রাক্-প্রাথমিক হতে প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সরকারের উপহারের বই শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের শুরুতেই তুলে দিয়েছি। ইতোমধ্যে বিভাগের তিনটি জেলায় শতভাগ বই বিতরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। বাকি জেলাগুলোতেও দ্রুত শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে। এখন পর্যন্ত পুরো বিভাগে ৯২ দশমিক ৮৭ ভাগ বই বিতরণ করা হয়েছে।

এমজেইউ