স্বাস্থ্যবিধি না মানলে অভিযান
খুলনায় মাস্কও ব্যবহার করছে না সাধারণ মানুষ
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়লেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না কেউ। হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধোয়া তো দূরের কথা খুলনায় মাস্কও ব্যবহার করছে না সাধারণ মানুষ।
এরই মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শনিবার (১৩ মার্চ) মাস্ক পরা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) চিঠি দিয়েছে।
বিজ্ঞাপন
চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার গত কয়েক মাসের তুলনায় বেড়েছে। সংক্রমণের হার রোধের জন্য স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সবার মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।
এরপরও খুলনায় করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে চরম অনাগ্রহ দেখা গেছে। ফলে জেলায় নতুন করে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দু’একদিনের মধ্যে অভিযান পরিচালনা করা হবে।
খুলনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনীহা রয়েছে অনেকের। অধিকাংশ মানুষ মাস্ক পরে না। জনবহুল এলাকা, গণপরিবহন; এমনকি অফিস প্রাঙ্গণেও সাধারণ মানুষকে মাস্ক ছাড়া চলাচল করতে দেখা গেছে।
রোববার (১৪ মার্চ) জেলা প্রশাসনের সামনের সড়কে মাইকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে প্রচার-প্রচারণা করতে দেখা যায়। পাশেই দেখা যায়, অনেকেই মাস্ক ছাড়া ঘুরছেন। রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিসহ পরিবহন চালকদের মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। যাত্রীদেরও মাস্ক পরিধানে অনীহা দেখা যায়। সেই সঙ্গে অনেক মানুষকে মাস্ক ছাড়া আড্ডা দিতে দেখা গেছে।
নগরীর ময়লাপোতা মোড়ে ইজিবাইকচালক শরিফুল ইসলামকে মাস্ক পরতে দেখা গেলেও মুখের নিচে রয়েছে তার মাস্ক। সঠিকভাবে মাস্ক পরেননি কেন প্রশ্ন করতেই মাস্কটি মুখের যথাযথ স্থানে উঠিয়ে দেন। তিনি বলেন, মাস্ক সঠিক স্থানেই ছিল, তবে নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ায় একটু নামিয়ে রেখেছিলাম। অনেক পথচারী মাস্ক ছাড়াই চলাচল করছেন।
রোববার দুপুরে খুলনা জেলা আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির সভায় গণপরিবহন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি দফতরে মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।
খুলনা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রমতে, রোববার পর্যন্ত খুলনা জেলায় এক লাখ ৪৪ হাজার ১৬ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৮৬ হাজার ৭৪১ এবং নারী ৫৭ হাজার ২৭৫ জন।
খুলনার সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, করোনার ঝুঁকি রয়েছে এখনো। টিকা নেওয়া মানেই করোনামুক্ত নয়। টিকার পাশাপাশি মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দৈনন্দিন কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, সর্বস্তরের মানুষকে মাস্ক ব্যবহারের জন্য বার বার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করলে করোনা ঝুঁকি কমানো সম্ভব। মাস্ক ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আরএমও মো. মিজানুর রহমান বলেন, করোনার সংক্রমণ সারাদেশের তুলনায় খুলনায় ভালো ছিল। তবে গত দুদিন আক্রান্ত ও রোগী ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। রোববার পাঁচজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। রোববার রাত পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ছয়জন ভর্তি রয়েছেন। দুদিন আগে রোগীর সংখ্যা ছিল দুজন। ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় মার্চ মাসের মাঝামাঝিতে রোগী বেড়েছে।
তিনি বলেন, শুধু টিকা নিলেই হবে না, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার টিকা দুই ডোজ। এক ডোজ নেওয়ার দুই মাস পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। টিকা নেওয়ার পর অন্তত দুই মাস সময় লাগে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে। ফলে টিকা নিলেই ঝুঁকিমুক্ত বলা যাবে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বাইরে এলেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইউসুপ আলী বলেন, খুলনায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চলছে। মাইকিং করা হচ্ছে। মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে। এরপরও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দু’একদিনের মধ্যে অভিযান চালানো হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হবে।
মোহাম্মদ মিলন/এএম