রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে বন বিভাগের দেড় কিলোমিটার এলাকায় চার বছর বয়সী ছোট-বড় ৫৪১টি গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। গত মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল থেকে রাতের মধ্যে কোন এক সময় গাছগুলো কেটে ফেলা হয়।

বন কর্মকর্তারা বলছেন, মহাসড়কের পাশে পথচারীদের জন্য হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) রাস্তা তৈরিতে খননকাজে নিয়োজিত স্কেভেটর চালকের হুকুমে স্থানীয়রা এসব গাছ কেটে নেয়। তবে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ থেকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের পূর্ব পাশের ওই অংশে সমস্ত গাছ গোড়া থেকে কাটা। বন বিভাগের লোকজন কাটা গাছের তল্লাশি করছেন। সড়কের পাশে বিভিন্ন পেঁয়াজ, রসুন ও শর্ষে খেতের ভেতর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়ায় নষ্ট হয়েছে ফসলী জমি। রেললাইনের পাশে অবস্থিত বিভিন্ন বাড়ির পিছনের ঝোপঝাড়ে কাটা গাছ লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বৃক্ষরোপন তহবিল থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারি থেকে রেলগেট পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ৪ হাজার চারা গাছ রোপণ করা হয়। এর মধ্যে মিশু, মেহগনি,সেগুন, চিকরাশি, আকাশি গাছ রয়েছে।

গোয়ালন্দ উপজেলার বন কর্মকর্তা (ফরেস্টার) মো. মনিরুজ্জামান খান জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তাকে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের উপকারভোগী সমিতির লোকজন গাছ কাটার কথা জানান। খবর পেয়েই তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পূর্ব পাশে বাফার সারের গোডাউনের পর থেকে কেকেএস সেফহোম পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকার রোপণকৃত সমস্ত গাছের চারা কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা।

সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাগানের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১১-১২ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি।

বন বিভাগের রাজবাড়ী জেলা রেঞ্জার মো. হাবিবুজ্জামান বলেন, রাতে জানার পর তাৎতক্ষণিকভাবে গোয়ালন্দের ফরেস্টারকে তদন্ত সাপেক্ষে গাছ কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেনেছি, রাস্তার কাজে নিয়োজিত ভেকু চালকের নির্দেশের স্থানীয় গ্রামের লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে সমস্ত গাছ কেটে ফেলেছে। বিষয়টি সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নওয়াজিস রহমান বিশ্বাস বলেন, মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার জন্য এইচবিবির কাজ চলছে। গাছগুলো সড়কের ঢালুতে রোপণ করা। এ কাজের সঙ্গে গাছ কাটার কোনো সম্পর্ক নেই। গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বনবিভাগকে চিঠি দিয়ে জানাতাম। বনবিভাগের জেলা রেঞ্জার রাতেই আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। তৃতীয় কোনো পক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে বলেছি। তারপওর ভেকু চালক জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন বলেন, মহাসড়কের পাশ থেকে রাতের মধ্যে এতগুলো গাছগুলো এভাবে কেটে ফেলা খুবই ন্যাক্কারজনক ও বড় ধরনের অপরাধ। বিষয়টি আমি পরে জানতে পেরেছি। খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বনবিভাগকে বলেছি।

মীর সামসুজ্জামান/আরকে