‘মা-বেটি রাস্তাত রান্না করে খাই। রাস্তাতেই ঘর করি থাকি। তাও একটা ঘর পাই না। মানুষের বাড়িত কাজ করি খাই। চেয়ারম্যানের কাছে কাগজ দিয়া আসছি তাও একটা ঘর দেয় না। এই রাস্তা দিয়া যাইতে কতবার চেয়ারম্যান-মেম্বারক কই, তাও কিছু করে না। রাস্তা দিয়া মাইনষি হুন্ডাত-সাইকেলত যায়। এইঠে বসি ভাত খাইলে সব ধুলা খাবারত পড়ে। আবার চুলাও ভাঙি যায়। জল পড়লে ভাত রান্না করা যায় না। বারবার ঠিক করির লাগে। নিজের টিউবওয়েল নাই। মাইনষি একটা দান করিছে ওইটার পানি খাই। সরকারের কাছত একটা ঘর চাই। ঘর দিলে হামার খুব ভালো হয়।

এভাবেই বলছিলেন নীলফামারী সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের কানাইকাটা কামারপাড়া গ্রামের ময়না রানী রায় (৫৫)। তিনি ওই এলাকার পন্ডিত রায়ের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রায় ১০ বছর ধরে কিশোরী মেয়ে পপি রানী রায়কে নিয়ে রাস্তার পাশে খাসজমিতে একটি ছোট দুই চালা টিনের ঘরে বসবাস করে আসছেন। ঘরে জায়গা না থাকায় রান্নার চুলাটি রাখা রাস্তার ওপরে। নেই পয়ঃনিষ্কাশন ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা। 

স্থানীয়রা জানান, ময়না রানীর মেয়ে সন্তান জন্মের পর আর কোনো খোঁজ নেন না তার স্বামী পন্ডিত রায়। ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মেয়েকে বুকে আগলে অন্যের বাড়ি ও জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে যা আয় হয়, তা দিয়েই কোনোমতে জীবিকা নির্বাহ করেন পঞ্চাশোর্ধ্ব এই নারী। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের জন্য আবেদন করেছিলেন। তবে চূড়ান্ত যাচাই-বাছাই শেষে সেই ঘর মেলেনি ময়নার কপালে। এদিকে অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া মেয়ে পপির পড়াশোনা। এ অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে থাকার জন্য নিরাপদ একটি বাসস্থান প্রয়োজন ময়না রানীর। ময়নাকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ময়নার মেয়ে পপি রানী ঢাকা পোস্টকে বলে, টাকার অভাবে ক্লাস ফোর থেকে পড়শোনা বন্ধ হয়ে গেছে। আমার মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে অনেক কষ্টে যা আনে তাই খাই। সরকার আমাদের একটা ঘর দিরে খুব ভালো হতো। আমি পড়াশোনা করতে চাই।

প্রতিবেশী হাজেরা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজ-কাম করিয়া খায়। তাদের খুব কষ্ট। দুঃস্থ ভাতা নিবার গেলেও টাকা চায়। টাকা হইলে দেয়, না হইলে দেয় না। রাইতটা পোহাইতে মাইনষের বাড়িতে কাজ করে আর রাস্তার ধারতে রান্ধে। মেয়েটাতো পড়াশোনা বন্ধ হওয়ায় ঘুরে বেড়ায়। মানুষ পুরাতন যে কাপড় দিয়েছে, ওইগুলোয় পরি বেড়ায়। প্রতিবেশী হিসেবে আমার চাওয়া, ময়না যেন একটা ঘর পায়। মরার আগত যেন ওয় একটা ঘর পায়। 

আরেক প্রতিবেশী কবিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বাড়ির মহিলাটা খুব কষ্টে এখানে থাকে। ধুলাবালি পড়ে রাস্তা দিয়ে গাড়ি গেলে। বৃষ্টি এলে না খেয়ে থাকে। এছাড়াও রাস্তাঘাটের মধ্যে যেন পাক (রান্না) করে গাড়ি গেলে অনেক সময় চুলা ভেঙে যায়। সরকার তো সবাইকে অনেক কিছু দিতেছে ঘর-বাড়ি, সাহায্য দিতেছে। এই মহিলাটাকে যদি একটা ঘর দিতো সরকার তাহলে তার স্থায়ী একটা বসবাসের জায়গা হতো।

পলাশবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইব্রাহিম তাকুলদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাছে ভূমিহীনের সার্টিফিকেট চেয়েছিল, আমি দিয়েছি। আমি আর কিছু জানি না। ইউএনও আমাকে আর কোনো দায়িত্ব দেয়নি। যাচাই-বাছাই করেছে তহশিলদার। কেন ঘর পায়নি বা পাবে কিনা জানি না।

নীলফামারী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, তিনি ভূমিহীন হলে আমাদের আরও আশ্রয়ণের ঘর আছে। তাকে দেওয়া হবে।

শরিফুল ইসলাম/আরকে