ভাসমান জেলে শিশু শহীদুল ইসলামের বয়স আড়াই বছর। নিয়ম অনুযায়ী লাল রঙের ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাপসুল খাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু আড়াই বছরে একবারও ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল খেতে পারেনি শহীদুল। 

একইভাবে ১৫ মাস বয়সী শিশু শাহানা আক্তার ও এক বছরের শিশু বিবি ফাতেমাও খেতে পারেনি ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাপসুল। চার বছরের শিশু আসিফ মাহমুদ, দুই বছরের শিশু নুরনবী ও ১ বছর বয়সী আয়েশাও ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল পায়নি।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার চররমনী মোহন ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় ৬টি ভাসমান জেলে পরিবার এসব তথ্য জানিয়েছেন। সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জেলার ১৪৮০টি কেন্দ্রে একযোগে দিনব্যাপী শিশুদেরকে ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল খাওয়ানো হলেও টিকা পায়নি এই ভাসমান জেলা পরিবার।

এদিকে ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল শিশুদের শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, অন্ধত্ব দূর করে ও ডায়রিয়া-নিউমোনিয়ার প্রকোপ কমায় বলে জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর। কিন্তু জেলে শিশুদের ভিটামিন 'এ' প্লাস ক্যাপসুলের শূন্যতা যুগ যুগ ধরেই থেকে গেছে। এ শিশুদের প্রয়োজনীয় টিকা ও ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুলে শূন্যতারোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জোরালো হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে দাবি করছেন সচেতন মহল।

শহীদুল জেলে আলমাস সর্দার ও শাহিদা বেগম দম্পতির ছেলে। শাহিদা জানান, তার ছেলের আড়াই বছর হয়েছে। একবারের জন্যও ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল তাকে খাওয়াতে পারেননি। কোনো ধরনের টিকাও দেওয়া হয়নি। কখন টিকা দেয়, কখন ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়- তারা তা কখনো জানতে পারেন না। শিশু শাহানা জেলে শাহজাহান মাঝি ও জান্নাত বিবির মেয়ে। 

জান্নাত বলেন, জন্ম থেকেই কোনো ধরণের টিকা তার মেয়েকেও দেওয়া হয়নি। এখন দিতে গেলে বলে আগে টিকা কার্ড করাননি কেন ? এছাড়া আমাদের জীবন কাটে নদীতে। ডাঙায় গিয়ে এসব টিকা দেওয়ার সুযোগ পায় না। পোলিও (ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল) কখন খাওয়ায় তাও কেউ আমাদেরকে জানায় না। কখনো মাইকেও বলতে শুনিনি।

শিশু ফাতেমা জেলে নুরনবী ও মুন্নি আক্তারের মেয়ে। মুন্নি জানান, এক কিলোমিটার দূরে একটি স্কুলে পোলিও খাওয়ানো হয় বলে শুনেছেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের কথা জানতে পারেন না তারা। জানলেও তারা নদীতে থাকেন। এজন্য নদী থেকে গিয়ে শিশুদেরকে পোলিও খাওয়ানো সম্ভব হয় না। যদি মেঘনারপাড় ধীবর বিদ্যা নিকেতনে একটি কেন্দ্র করা হতো তাহলে তাদের শিশুরা টিকা ও পোলিও’র সুবিধা পেত।

ভাসমান জেলে সর্দার সোহরাব মাঝি বলেন, সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে বেড়ি এলাকা মাতাব্বরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়েছে। একইদিন দুপুরে মাইকিং করতে শুনেছি। কিন্তু তখন জেলে শিশুদেরকে ক্যাপসুল খাওয়ানোর সুযোগ ছিল না। কারণ জেলেরা তখন মাছ শিকারে নদীতে ছিল। আমাদের কাছাকাছি মেঘনারপাড় ধীবর বিদ্যা নিকেতনে একটি কেন্দ্র করে জেলে শিশুদের টিকা ও ভিটামিন 'এ' ক্যাপসুল সেবনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, জেলায় এবার ৩ লাখ ৯২৫ শিশুকে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী কেন্দ্রগুলোতে সোমবার একদিনের জন্য ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এছাড়া স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ক্যাপসুল খাওয়ানোর সুযোগ রয়েছে। জেলে শিশুদের ক্যাপসুল না পাওয়ার বিষয়টি শুনেছি। তাদের জন্য সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে মজুচৌধুরীরহাট নদী এলাকায় একদিনের একটি ক্যাম্পের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

হাসান মাহমুদ শাকিল/আরকে