শীতবস্ত্র নেই, আমাদের একটা কম্বল দেন
শীতবস্ত্রের অভাবে গরিব অসহায় ও নিম্নআয়ের মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছেন
উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ও হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা হিম বাতাসে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে জেলার তাপমাত্রা। কনকনে শীতের সঙ্গে বৃষ্টির মতো মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার দাপটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার গরিব ও অসহায় মানুষ।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শীতবস্ত্রের অভাবে গরিব অসহায় ও নিম্নআয়ের মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
বিজ্ঞাপন
আবহাওয়া অফিস জানায়, প্রতি বছর জেলায় অক্টোবরের শেষের দিকে ও নভেম্বরের প্রথম দিকে শীত নামলেও ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ তিন মাস শীত বেশি অনুভূত হয়। বিশেষ করে হিমালয়ের ঠান্ডা বাতাশে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হয় তেঁতুলিয়ায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তেমন কোনো ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকায় জেলার জনগোষ্ঠীর বড় অংশ পাথর ও চা-শ্রমিক। যারা দিন আনে দিন খায়। শীতকাল এলে খেটে খাওয়া এসব মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ঘন কুয়াশা ও হাড় কাঁপানো শীতে কাজে যেতে পারেন না তারা।
বিজ্ঞাপন
শীত নিবারণের জন্য তাদের নেই পর্যাপ্ত কাপড়৷ করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কোনো রকম কাজ করতে পারলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শীত। গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেকে শীত নিবারণের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির আঙিনায় আগুন পোহান। মানবেতর জীবনযাপন করছেন কেউ কেউ।
এ অবস্থায় জেলার পাঁচ উপজেলার ৪৩ ইউনিয়নের অসহায় ও শীতার্ত মানুষের জন্য ২২ হাজার শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে অসহায় মানুষের শীতবস্ত্র কেনার জন্য পাঁচ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে তা এখনও মানুষের কাছে পৌঁছায়নি।
জানা গেছে, প্রতি বছর শীতার্ত মানুষের মাঝে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।
বেসরকারি তথ্যমতে, জেলার পাঁচ উপজেলায় প্রায় ১২ লাখ মানুষের বসবাস। ১২ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ গরিব ও অসহায়। প্রতি বছর যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয় তা লাখের ঘরে পৌঁছায় না। ফলে অনেক শীতার্ত মানুষ শীতবস্ত্র থেকে বঞ্চিত হন।
সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের রাজারপাট গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা অবিরন বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। শীতের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারি না। শীতবস্ত্র নেই, কেউ আমাদের একটা কম্বল দেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার পাথরশ্রমিক জাহিদুল ইসলাম বলেন, শীতকালে সবাই শীতবস্ত্র পায়; আমরা পাই না। তাহলে প্রতি বছর যেসব শীতবস্ত্র বা কম্বল আসে সেগুলো কোথায় যায়? সরকারের কাছে আমাদের অনুরোধ; গরিব মানুষের জন্য শীতবস্ত্রের ব্যবস্থা করেন- না হয় শীতে আমরা মারা যাব।
পঞ্চগড় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় প্রতি বছর পঞ্চগড়ে শীত বেশি থাকে। ফলে পাথর ও চা-শ্রমিকসহ অসহায় মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। তবে জেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যােগ নেয়া হয়েছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, হিমালয়ের শীতল বাতাসে পঞ্চগড়ে দিন দিন বাড়ছে শীত। শীতের তাপমাত্রা ওঠানামা করে। তাপমাত্রা ওঠানামার সঙ্গে শীত তীব্র হয়।
এএম