আহ্বায়ক কমিটিতেই ১৯ বছর, রাজবাড়ী যুবলীগের সম্মেলন শনিবার
দীর্ঘ ১৯ বছর পর শনিবার (৪ মার্চ) রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজবাড়ীর ঐতিহাসিক শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ ১৯ বছর পর আওয়ামী লীগের এই অন্যতম সহযোগী এ সংগঠন পাবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
এত বছর পর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক আনন্দ-উল্লাস দেখা দিয়েছে। কে হবেন রাজবাড়ী আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা কেন্দ্রে চালাচ্ছেন জোর তদবির। যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের ছবিসংবলিত ব্যানার-ফেস্টুন টাঙিয়ে তারা দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। যুবলীগ নেতারা বলছেন, ত্যাগী, পরীক্ষিত ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতৃত্ব চাইছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, রাজবাড়ী জেলা যুবলীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয় ১৯৯৬ সালে। এরপর ২০০৪ সালে ওই কমিটি ভেঙে দিয়ে জহুরুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং আবুল হোসেন ও শাহ মো. জাহাঙ্গীর জলিলকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৩১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। এরপর আর কমিটি হয়নি। কেটে গেছে ১৯ বছর। কমিটির অনেকেই নিষ্ক্রিয়। কেউ কেউ চলে গেছেন রাজবাড়ীর বাইরে। বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম ব্যবসায়িক কাজে ঢাকায় থাকছেন দীর্ঘদিন যাবত। যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ মো. জাহাঙ্গীর জলিল জেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে সাংস্কৃতিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।
সভাপতি পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান শরীফ, সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান শামীম, যুবনেতা মো. নুরুজ্জামান মিয়া সোহেল, রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস আশরাফুল ইসলাম আশা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হরিপদ সরকার রানা ও আল মাসুদ।
বিজ্ঞাপন
সভাপতি পদে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মো. শামীম রেজা লিটন, রাজবাড়ী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ পরাগ। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলী হোসেন পনির ছেলে আলী সাদমান রুদ্রের নামও শোনা যাচ্ছে।
সাধারণ সম্পাদক পদে সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত হাসান, যুবলীগ নেতা রামিম হোসেন, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাকারিয়া মাসুদ রাজীব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এরশাদ, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাহিদুল আলম রাজু, সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিহাব আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা একেএম রিপনের নাম শোনা যাচ্ছে।
নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ ১৯ বছর পর রাজবাড়ী আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন হচ্ছে। ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টায় রাজবাড়ীর ঐতিহাসিক শহীদ খুশি রেলওয়ে ময়দানে এই সম্মেলন শুরু হবে।
সম্মেলনে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিল। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী, রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জিল্লুল হাকিম। এছাড়া সম্মেলনে কেন্দ্রীয় যুবলীগের নেতাকর্মী ও রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।
সভাপতি প্রার্থী রাজবাড়ী সরকারি কলেজের সাবেক জিএস যুবনেতা এ্যাডভোকেট আশরাফুল ইসলাম আশা বলেন, দীর্ঘদিন রাজবাড়ী যুবলীগ ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। সম্মেলনের মাধ্যমে ১৯ বছর ধরে ঘুমানো সংগঠন আবারো জেগে উঠবে। রাজবাড়ীর যুবলীগ প্রাণ ফিরে পাবে।
রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী জাকারিয়া মাসুদ রাজীব বলেন, যুবলীগের সম্মেলনকে ঘিরে এখন জেলায় সাজসাজ রব। সম্মেলনকে ঘিরে সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শওকত হাসান বলেন, দলের দুর্দিনে যারা হাল ধরেছিলেন, তাদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। বিশেষ করে সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাকর্মীকে মনোনীত করার দাবি তার।
জেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ মো. জাহাঙ্গীর জলিল বলেন, নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আবারো রাজবাড়ীতে যুবলীগ প্রাণ ফিরে পাবে। নতুন কমিটিতে যেন ত্যাগী, পরীক্ষিত কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যারা দুর্দিনে রাজপথে ভূমিকা রেখেছেন।
জেলা যুবলীগের অপর যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল হোসেন বলেন, সম্মেলন সফল করতে আটটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব রাজবাড়ী এসে সম্মেলন প্রস্তুতি সভা করে গেছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জীবনবৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৫ জনের বেশি জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন।
রাজবাড়ী জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক জহুরুল ইসলাম বলেন, সম্মেলনের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পূর্ণ। যারা সৎ ও যোগ্য তারাই আগামীতে নেতৃত্বে আসবে।
মীর সামসুজ্জামান/এমজেইউ