বালু নেওয়ার নামে কাটা হচ্ছে মাটি, হুমকিতে ময়মনসিংহ শহর রক্ষা বাঁধ
ব্রহ্মপুত্র নদ খননের পর নদের পাড়ে রাখা বালু নেওয়ার নামে মূল মাটি কেটে নেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে ময়মনসিংহ শহর রক্ষা বাঁধ। শুধু শহর রক্ষা বাঁধই নয়, এতে নদটি খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যও ভেস্তে যেতে বসেছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ সচেতন মহল।
মধ্যরাতে ব্রহ্মপুত্র নদের থানার ঘাটসহ বেশ কিছু পয়েন্টে ভেকু দিয়ে ট্রাকে বালু তোলার কাজ করতে দেখা যায়। তবে দিনের আলোতে গিয়ে দেখা মেলে শুধু বালুই নয়, নেওয়া হয়েছে মূল মাটিও। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে কেটে পড়েন শ্রমিকরা। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হন ইজারাদার পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, মাটিসহ তো কাটছে না। শুধু বালু কাটছে। আর বালু তুলতে গেলে তো শুধু বালুই ওঠে না। নদীর বিভিন্ন লেয়ার আছে সেখান থেকেই বালু তুলছি। এসব বলতে বলতেই উত্তেজিত হয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে আরও স্পষ্ট হতে জেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করা হয় ইজারা দেওয়ার চুক্তির শর্ত। সেখানে স্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া আছে যে, রাতে বালু কেটে নেওয়া ও নদের মূল মাটি কাটতে পারবে না ইজারাদার। অর্থাৎ শর্ত ভঙ্গ করে এমন কাজ করলেও তা নজরে আসেনি কারও। ময়মনসিংহ জেলায় ১৮টি স্থানে সরকারিভাবে বালু নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ উঠেছে- এর বাইরেও নদের বিভিন্ন পয়েন্টে অবৈধভাবে বালু কাটছে একাধিক সিন্ডিকেট।
বিজ্ঞাপন
ময়মনসিংহ পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, নদী খনন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি, নদীকে খালে পরিণত করা এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দেওয়ার কাজটা এখন আমাদের সামনে দৃশ্যমান। কিন্তু সব জেনেও নীরব কর্তৃপক্ষ।
ময়নসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা ফেরাতে আমাদের দীর্ঘদিন আন্দোলনের ফসল হচ্ছে এই খনন। কিন্তু যথাযথভাবে কাজ তো হচ্ছেই না বরং এখানে লুটপাট হচ্ছে। আমার মনে হয় প্রশাসনও ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
ময়মনসিংহ জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, নদী রক্ষা কমিটির মিটিংসহ বিভিন্ন জায়গায় বারবার বলার পরও প্রশাসন কোনো একটা অদ্ভুত কারণে কুম্ভকর্ণের মতো আচরণ করছে। এটা প্রশাসনের এক ধরনের উদাসীনতা। যার ফলে এখন হুমকির মুখে শহর রক্ষা বাঁধ।
ময়মনসিংহ জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য মীর গোলাম মোস্তফা বলেন, প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। না হলে জনসাধারণ ভাববে যে সিন্ডিকেটটির সঙ্গে প্রশাসনেরও যোগসাজশ রয়েছে। তাই প্রশাসনকে দ্রুত এ ব্যাপারে কর্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পারভেজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমাদের নলেজে ছিল না। এমনটি যদি হয়ে থাকে তাহলে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২ হাজার ৭৬৩ দশমিক ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্প শুরু হয়।
উবায়দুল হক/আরএআর