আসমা আক্তার

শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও পরিবারের বোঝা হতে চাননি আসমা আক্তার। তাই বাবা মায়ের অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিখেছেন ব্লক বাটিকের কাজ। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। আসমা ব্লক বাটিকের কাজ করে ঢাকা বিভাগ থেকে দ্বিতীয় সফল আত্মকর্মী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কারও গ্রহণ করেছেন।

শরীয়তপুর সদরের ডোমসার গ্রামের মৃত লাল মিয়া হাওলাদার ও জবেদা বেগম দম্পতির ষষ্ঠ সন্তান আসমা আক্তার। জন্ম থেকেই মেরুদণ্ডের হাড় বাঁকা হওয়ায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না তিনি। কিন্তু শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তোয়াক্কা না করে পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছেন আসমা। শরীয়তপুর জেলা শহরের মাঝি আমিন উদ্দিন কমপ্লেক্সে একটি দোকান রয়েছে তার। দোকানের বিক্রি থেকে বর্তমানে তার মাসিক আয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভার্চুয়ালি উপস্থিতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সফল আত্মকর্মী হিসেবে 'জাতীয় যুব পুরষ্কার ২০২২' পেয়েছেন তিনি। 

রাজধানী ঢাকার ইসলামপুর থেকে কাপড় কিনে এনে শান্তিনগর এলাকার ভাড়া বাসায় নিজে ও তার নিজস্ব কর্মী দিয়ে নান্দনিক সব ডিজাইনে ব্লক বাটিকের কাজ করেন আসমা। কাজ শেষে সেই তৈরি পোশাকের দাম হয়ে যায় দুই থেকে তিনগুণ। তার ব্লক বাটিকের কারখানায় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন চার হাজারের বেশি নারী।

আসমা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। পড়াশোনা করলেও চাকরি করিনি। আমার পরিবার আমাকে সাবলম্বী হওয়ার জন্য গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু পরিবারের উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকলে আমি এখন বোঝা হয়ে থাকতাম। প্রথমে আমি একটি কম্পিউটারের দোকান দিলেও সফল হতে পারিনি। এখন লেডিস শপ ও ব্লক বাটিকের কাজ করছি। ব্লক বাটিকের কাজ করে আমি সাবলম্বী হয়েছি। মাসে এখন আমার ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। এখানে আমি প্রায় ১ বছর ধরে বিনামূল্যে মেয়েদের কাজ শেখাচ্ছি। আমি চাই সকল প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে দিয়ে মেয়েরা আমার মতো নিজের পায়ে দাঁড়াক।

তিনি আরও বলেন, আমার বড় একটি জায়গা দরকার। জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পরে ডিসি স্যার আমাকে আশস্ত করেছেন তিনি আমাকে জায়গার ব্যবস্থা করে দেবেন। আমার ইচ্ছে আমি অনেক বড় পরিসরে এগিয়ে যাব। যতদিন বেঁচে থাকি শরীয়তপুরের মেয়েদের বিনামূল্যে কাজ শিখিয়ে যাব। মেয়েদের সাবলম্বী করতে শুধু ব্লক বাটিক নয়, নকশিকাঁথা, হাতের অন্যান্য কাজও শেখানো হয় আমার কারখানায়।

তিনি আরও বলেন, আমার শপে মূলত ব্লক বাটিকের পোশাক বিক্রি হয়। ক্রেতারা জামদানি, পশু-পাখির নকশা, বর্ণমালার লেখা, ফুল, পাতার ডিজাইন বেশি পছন্দ করেন। এছাড়াও তারা নিজেদের পছন্দের ডিজাইন দিয়ে যান মাঝে মধ্যে। অর্ডারের ডিজাইন অল্প সময়ে তাদেরকে করে দেই। সামনে রমজানের ঈদ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হলেও বিক্রি কয়েকগুণ বাড়ানোর ইচ্ছে আমার।

তাসফিসা নামে এক প্রশিক্ষণার্থী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি আসমা আপার কাছে বিনামূল্যে ব্লক প্রিন্ট, ব্লক বাটিকের কাজ শিখি। তিনি ১ বছর ধরে আমাদের কাজ শেখাচ্ছেন। রং তুলি হাতে ধরে আপা খুব ভালোভাবে কাজ শেখান আমাদের। আমাদের কাজ শেখা প্রায় শেষ। আর্থিক সহযোগিতা পেলে আমরা নিজেরাই এখন উদ্যোক্তা হতে পারি।

খুরশিদা পারভীন নামে অন্য এক প্রশিক্ষণার্থী বলেন, আমি ৬ মাস ধরে আসমা আপার কাছে ব্লক বাটিকের কাজ শিখছি। আপা আমাকে বিনামূল্যে ব্লক বাটিক, হ্যান্ড প্রিন্টসহ অন্যান্য কাজ হাতে ধরে সুন্দরভাবে শেখাচ্ছেন। আমি হয়তো আসমা আপার মতো হতে পারব না, কিন্তু আর্থিক সহযোগিতা পেলে তার মতো হওয়ার চেষ্টা করতাম।

শরীয়তপুর যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আসমা আক্তার একজন সফল উদ্যোক্তা। তিনি আমাদের জানিয়েছেন পরিত্যক্ত জমিতে তার ব্যবসা পরিচালনার ব্যবস্থা করে দিলে তিনি আরও বড় পরিসরে কাজ করতে পারবেন। আমরা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।

এবিএস