জন্মত্রুটি নাকি চিকিৎসকের গাফিলতি?
নীলফামারীর সৈয়দপুরে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে সিজারের সময় পেট কেটে যাওয়ার পর এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য চিকিৎসকরা বলছেন জন্মত্রুটির কারণে ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় ওই নবজাতকের মৃত্যুর খবরটি ছড়িয়ে পড়লে প্রসূতির পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীরা ওই ক্লিনিকে জড়ো হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বিজ্ঞাপন
পরে খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফয়সাল রায়হান ও সৈয়দপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম ওই ক্লিনিকে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এর আগে সোমবার সকালে প্রসব বেদনা নিয়ে সূর্যের হাসি ক্লিনিকে ভর্তি হন দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বেলাইচন্ডি গ্রামের মাস্টারপাড়ার রওশন সরকার রাজুর স্ত্রী মোছা. চাঁদনী।
বিজ্ঞাপন
সোমবার সন্ধ্যায় প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেন ডা. নুরনাহার নার্গিস ও তার স্বামী ডা. মিজানুর রহমান। এ সময় পরিবারের পক্ষ থেকে প্রসূতির অস্ত্রোপচার কালে নবজাতকের পেট কেটে ফেলার অভিযোগ তোলা হয়। পরে অসুস্থ নবজাতককে রংপুরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।
নবজাতকের বাবা রওশন সরকার রাজু ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাত ৮টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জানান এই শিশুকে বাঁচানো সম্ভব নয়। তাই নবজাতককে নিয়ে রাতেই সূর্যের হাসি ক্লিনিকে ফেরত আসি। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নবজাতকের কোনো প্রকার চিকিৎসা সেবা প্রদান করেনি। তাদের অবহেলার কারণেই আমার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ এখন বলছে বাচ্চার আগে থেকেই সমস্যা ছিল। অথচ কয়েকদিন আগেও আলট্রাসনোগ্রাম করেছি তাতে সব কিছু নরমাল ছিল। তারা সব ঠিক দেখেই তো সিজার করেছে। মূলত সিজার করার সময় পেট কেটে ফেলায় নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে পড়েছে। তাছাড়া রংপুরে যেতে বললেও রেফার্ড স্লিপ বা কোনো কাগজপত্র দেয়নি।
এ বিষয়ে ডা. নুরনাহার নার্গিস ও ডা. মিজানুর রহমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল চিকিৎসা কর্মকর্তা নাজমুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটি গ্যাস্ট্রসচিসিস নামক এক ধরনের জন্মত্রুটি। এ ধরনের ত্রুটি নিয়ে শিশুটির জন্ম হতে পারে।
সৈয়দপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নেওয়া হয়েছে। নবজাতকের বাবা বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফয়সাল রায়হান ঢাকা পোস্টকে বলেন, কী কারণে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে তা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাই বলতে পারবেন। তাই সিভিল সার্জনের নির্দেশে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শরিফুল ইসলাম/এনএফ