ন্যূনতম অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এক বছর আগে খনন করা হয়েছিল কুয়াকাটা খালটি। কিন্তু খনন সঠিকভাবে না হওয়ায় এটি আবার পুরোনো অবস্থায় ফিরে গেছে। স্থানীয়দের অবাধ দখল আর দূষণে নর্দমায় রূপ নিয়েছে খালটি।

বর্তমানে এমন চিত্র ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের শীর্ষে থাকা কুয়াকাটা পৌর শহরের একমাত্র খালের। 

প্রায় ৬০ একর বা পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের খালটি শুরু হয়েছে খাপড়াভাঙ্গা নদীর ফাঁসিপাড়া স্লুইচ গেট থেকে। মাঝখানে কচ্ছপখালী হয়ে কুয়াকাটা পৌরসভার বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে নবীনপুর গিয়ে মিশেছে। স্থানীয় ও পরিবেশবাদীরা পৌর শহরের এই খালটিকে কুয়াকাটার অক্সিজেন দ্বার বলে অবিহিত করেন। কিন্তু দিনে দিনে যেভাবে দখল ও দূষণ হচ্ছে তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা। খালটি মরে গেলে ভ্রমণপিপাসুরা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের এই খালটির দুই পাশে যে যার মতো করে স্থাপনা নির্মাণ করে দখল করছেন। খালের মধ্যে ইট-সিমেন্ট দিয়ে পিলার নির্মাণ করে ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করেছেন অনেকে। তাছাড়া পৌরবাসীর বাসার বর্জ্য, আবাসিক হোটেলের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এমনকি পৌর ভবনেরও ময়লা আবর্জনা এই খালে ফেলে হয়। কুয়াকাটা মাছ বাজার ও কাঁচা বাজারের ময়লা-আবর্জনা ফেলার স্থানও এই খাল।

কুয়াকাটা পৌর ভবন সংলগ্ন এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষই খালটি দূষণ করছেন। তাছাড়া তাদের দেখা উচিত খালটি কে দখল করছে? কিন্তু মেয়র খাল রক্ষার কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে নিরব থেকে এক ধরণের উৎসাহ দিচ্ছে।

আবাসিক হোটেল ব্যবসায়ী মাসুদ পারভেজ সাগর বলেন, খালটিকে মূলত আমরা নিজেরাই নষ্ট করেছি। ব্যবসায়ীরা যদি এটিকে ময়লার ভাগাড় না বানাতো তা হলে চমৎকার একটি খাল থাকত। আমরা খালটি পুনরুদ্ধারের দাবি জানাচ্ছি।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ বলেন, কুয়াকাটায় এসে সৈকতের পাড়ে নৌকা ভ্রমণ করে পর্যটকরা। এই খালটি উদ্ধার করা হলে এখানেও পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচিত হতো। কিন্তু তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। খালটি মরে গেলে পৌর শহর প্রাকৃতিক দিক থেকে ভারসাম্য হারাবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কলাপাড়া জোনের সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মাননু বলেন, কুয়াকাটার ঐতিহ্যবাহী এই খালে এক সময়ে বড় বড় লঞ্চ চলতো কিন্তু এখন নৌকাও চলতে পারছে না। দখল আর দূষণের কবল থেকে খালটি রক্ষা করতে না পারলে পুরো শহরটি ঝুঁকিতে পড়বে।

মহিপুর ভূমি অফিস থেকে জানা গেছে, কুয়াকাটা খালটির অবস্থানভেদে প্রস্থ ছিল ৬০ থেকে ১০০ ফুট। খালটির আয়তন ছিল ৬০ একর ৫৯ শতাংশ। কিন্তু বর্তমান বিএস জরিপে দেখানো হয়েছে, ৩৭ একর ৭৮ শতাংশ। এর মধ্যে সাত একর লতাচাপলী ইউনিয়নে বাকি অংশ কুয়াকাটা পৌরসভায়।

পরিবেশ কর্মীদের দাবি এসএ নকশা অনুসারে ৬০ একর ৫৯ শতাংশ খালের সীমানা চিহ্নিত করার পরে খালটি উদ্ধার করে ফের খনন করা জরুরি। নইলে কুয়াকাটার টেকসই উন্নয়ন চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।

কলাপাড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, কুয়াকাটা খাল অনেকস্থানে দখল হয়েছে। এসব দখলদার উচ্ছেদ এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার জানান, খালটি রক্ষায় চেষ্টা করে যাচ্ছি। খালের কালভার্টের পাশের মাছের বাজারটি একটি নির্দিষ্ট এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজারটি সরাতে পারলে খালে বর্জ্য ফেলা কমবে এবং হোটেলগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে যেন ময়লা না ফেলে। তারপরও কিছু লোক খালটি দূষণ করছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে এটিকে জীবন্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে