ছেলের অত্যাচারে কাঁদছেন কাজি আব্দুস সাত্তার

রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় ছেলের অত্যাচারে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ছাড়লেন বৃদ্ধা মা-বাবা। মাদক সেবন ও কারবারিতে জড়িত ছেলের নির্যাতনে দিশেহারা মা-বাবা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন। পুলিশে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় দিশেহারা বৃদ্ধ কাজি আব্দুস সাত্তার ও তার স্ত্রী রোকেয়া বেগম।

পীরগাছা উপজেলার মকরমপুর গ্রামে বসবাস কাজি আব্দুস সাত্তারের। তিনি বিজিবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য। তার পরিবারে আট সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে ও ছয় মেয়ে। বড় ছেলে প্রবাসে থাকেন।

বাকি ছয়-মেয়ের বিয়ে হয়েছে। শুধুমাত্র ছোট ছেলে মামুনুর ইসলাম শান্তকে সঙ্গে নিয়ে সংসার চলছিল। কিন্তু সেই ছেলের কারণে পাঁচ মাস ধরে নিজ বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না অসহায় বৃদ্ধ মা-বাবা।

কাজি আব্দুস সাত্তার বলেন, ছোট ছেলে মামুনুর ইসলাম শান্ত দুই বছর ধরে মাদক সেবন ও বেচাকেনাসহ বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত। প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া বিভিন্ন স্থানে একাধিক বিয়ে করেছে।

বাড়িতে বাইরের লোকজন নিয়ে এসে মাদক সেবন করে। এসব ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় আমাদের ওপর চড়াও হয় শান্ত। শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। ২৪ জুলাই বাধ্য হয়ে নিজ বাড়ি থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যাই আমরা। এরপর থেকে আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না শান্ত।

পীরগাছা থানায় শান্তর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি এবং আদালতে আরও একটি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও গ্রেফতার করছে না পুলিশ- এমন অভিযোগ কাজী আব্দুস সাত্তারের।

শান্তর মা রোকেয়া বেগম বলেন, ছেলের অত্যাচার আর নির্যাতনে আমরা অতিষ্ঠ। আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে ছেলে। বাড়ির জমি, গাছ-পালা ও গরু বিক্রি করে মাদকের ব্যবসা করছে শান্ত। এখন তার ভয়ে আমরা বাড়িছাড়া। বৃদ্ধ বয়সে অন্যের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমরা তার বিচার চাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৬ মে বৃদ্ধ বাবা-মায়ের হাত-পা বেঁধে বদ্ধ ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়ে ফেলার চেষ্টা করেন শান্ত। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় গভীর রাতে তাদের উদ্ধার করে পুলিশ। 

এ ঘটনার কিছুদিন পর শান্তকে ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। সেখান থেকে জামিনে ছাড়া পেয়ে আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। বাবা-মায়ের ওপর শুরু করেন নির্যাতন। 

২৪ জুলাই বাবা-মাকে বেধড়ক মারপিট ও অস্ত্র দিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন শান্ত। এ সময় কৌশলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান বাবা-মা। এই ঘটনায় ছেলে শান্তর বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন বাবা।

এ অবস্থায় মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে পীরগাছা প্রেস ক্লাবে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন অসহায় বাবা আব্দুস সাত্তার। প্রতিকার চান সাংবাদিকদের কাছে। ছেলে শান্তর বিরুদ্ধে তুলে ধরেন নানা অভিযোগ।

গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকার পরও মামুনুর ইসলাম শান্তকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না এমন প্রশ্নের জবাবে পীরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল ইসলাম বলেন, আমরা এর মধ্যে কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি। শান্তকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এএম