বিপন্নপ্রায় ৬০ প্রজাতির অর্কিড সংগ্রহে রয়েছে তার
খাগড়াছড়িতে বিলুপ্ত ও বুনো জাতের অর্কিডের সংরক্ষণাগার গড়ে তুলেছেন সাথোয়াই মারমা নামের এক তরুণ। কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন পাহাড় থেকে বিপন্ন প্রজাতির অর্কিডের জাত সংগ্রহ করেছেন তিনি। পাহাড়ের হারিয়ে যাওয়া অর্কিড রক্ষায় তিনি এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
প্রায় সাত থেকে আট বছর ধরে সংগ্রহ করা বিপন্ন ও দেশীয় প্রজাতির অর্কিড দিয়ে সংরক্ষণাগার গড়ে তুলেছেন খাগড়াছড়ি জেলা শহরের রাজ্যমনি পাড়ার তরুণ সাথোয়াই মারমা। বর্তমানে তার সংরক্ষণাগারে ডেন্ডোবিয়াম লিন্ডলে, ডেন্ডোবিয়াম পিয়েরাড্ডি, সিলোজিনি, এনসেপ, ফক্সটেইল, ট্রান্সপারেন্স, একেম্পে রিগিদা, এরিয়া টেমেন টোসাসহ প্রায় ৬০টি বিপন্ন প্রজাতির অর্কিড রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
কোনো ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই পাহাড়ের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে তিনি এসব বিরল জাতের অর্কিড সংগ্রহ করেছেন। ফুলের টবের পরিবর্তে বাহারি রঙের অর্কিড শোভা পাচ্ছে তেঁতুল, আম, জারুল, সোনালু, কাঁঠাল গাছে। বন থেকে সংগ্রহ করা এসব অর্কিডকে রাখা হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। দুষ্প্রাপ্য ও বিপন্ন অর্কিড রক্ষায় গড়ে তুলেছেন ‘হিল অর্কিড সোসাইটি’।
বিজ্ঞাপন
ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অর্কিড দেখা যায়। সাধারণত বনের বট ও জারুলসহ বিভিন্ন বড় বড় গাছে পরাশ্রয়ী এসব বুনো অর্কিড দেখা যেত। তবে, পাহাড়ের প্রাকৃতিক বন ধ্বংসের কারণে ক্রমশ বিলুপ্ত হচ্ছে এসব অর্কিড।
অর্কিড সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সাইথোয়াই মারমা ঢাকা পেস্টকে বলেন, একসময় পাহাড়ের বড় বড় গাছে অর্কিড দেখা গেলেও তা আজ বিলুপ্ত। আমাদের দেশীয় অর্কিড যাতে হারিয়ে না যায় সে কারণে ৭/৮ বছর ধরে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গা থেকে নানা জাতের অর্কিড সংগ্রহ করছি। অর্কিডগুলোকে বন্য বা প্রাকৃতিক পরিবেশ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন গাছে সৃজন করা হয়েছে।
অর্কিড-প্রেমী নেইমরা মারমা ঢাকা পেস্টকে বলেন, অর্কিড আমার খুব ভালো লাগে। আমাদের দেশে ১৪০ থেকে ১৫০ প্রজাতির বন্য অর্কিড পাওয়া যায়। দুষ্প্রাপ্য অর্কিড রক্ষায় এটি খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এমন উদ্যোগের কারণে পাহাড়ের হারিয়ে যাওয়া বুনো অর্কিড রক্ষায় অনেকে উৎসাহিত হবেন।
স্থানীয় সবুজ চাকমা ঢাকা পেস্টকে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে একসময় বেশি জঙ্গল ছিল। জঙ্গলে যে বড় বৃক্ষ ছিল সেগুলোতে অর্কিড থাকত, ক্রমান্বয়ে বংশবৃদ্ধি করত। অনেক বছর ধরে বন ধ্বংস করার কারণে এই অর্কিডগুলো আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। যার কারণে আগে যে পরিমাণ অর্কিড দেখা যেত, তা এখন আর দেখা যায় না। এসব বিষয় চিন্তা করে খাগড়াছড়ি হিল অর্কিড সোসাইটি নিজ উদ্যোগে সংরক্ষণাগার গড়ে তুলেছে। এটি খুবই ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগের কারণে হারিয়ে যাওয়া অর্কিডের দেখা মিলবে তাদের কাছে।
জাফর সবুজ/এবিএস