রাতের আঁধারে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইটভাটায়
রাতের আঁধারে মাদারীপুরের কালকিনিতে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের কানুরগাঁ গ্রামে তিনটি ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রির অভিযোগ উঠেছে মোয়াজ্জেম খান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাটি কেটে গাড়ি ভর্তি করে বিভিন্ন ইটভাটা ও জায়গা ভরাটের কাজে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বুধবার (১২ এপ্রিল) রাত থেকে শুরু করে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের কানুরগাঁ গ্রামে চলে মাটি কাটার মহোৎসব। রাতের আঁধারে কৃষিজমির মাটি লুটের ঘটনায় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন এলাকার কৃষকরা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের কানুরগাঁ এলাকায় প্রায় ১ একর ফসলি জমির মাটিকাটা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত এস্কেভেটর রয়েছে। জমির উত্তর ও পূর্ব প্রান্ত থেকে মাটিকাটা হয়েছে।
জানা গেছে, মধ্য রাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে এ মাটি কাটার উৎসব। এতে করে জমির পাশে অবিস্থত ঘরবাড়ি বৃষ্টির পানিতে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া মাটিকাটার স্থানের চারদিকে ইরি ধান, পাটসহ অনেক আবাদি ফসল থাকায় সেগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান কৃষকরা।
বিজ্ঞাপন
অভিযোগ অস্বীকার করে মোয়াজ্জেম খান বলেন, মাটিকাটার সঙ্গে আমি জড়িত নই। কে বা কারা মাটি কাটছে আমি তাও জানি না।
এদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, মোয়াজ্জেম খানসহ এলাকার বেশ কয়েকজন মিলে জোর করে এস্কেভেটর মেশিন দিয়ে জমিতে মাটি কেটে বিক্রি করছেন। মাটি কাটার কারণে আশপাশের ফসলি জমিও হুমকির মুখে পড়েছে। তারা এখানকার ক্ষমতাশালী হওয়ার কারণে আমরা কিছু বলতে পারছি না। বলতে গেলে তারা আমাদের উল্টো মারতে আসে।
আলেক শিকদার, শাজাহান খান, নুরু শিকদারসহ বেশ কয়েকজন কৃষকরা জানান, মোয়াজ্জেম খান অবৈধভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে আমাদের আবাদি পাট মেছতা ও ধানের খেতের পাশ থেকে মাটি কেটে পুকুর খনন করছেন। আর খননকৃত সেই মাটি পার্শ্ববর্তী ইটভাটায় বিক্রি করছেন। এতে আমাদের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, খননের ফলে আমাদের জমিসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি জমি ধসে পুকুরে নেমে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে আমাদের প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
হারুন শিকদার ও শামিম হোসেন সবুজ হাওলাদার জানান, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের আঁধারে ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর খনন করছেন মোয়াজ্জেম খান। অবৈধভাবে মাটি খননের ফলে ফুঁসে উঠছে গ্রামবাসী। যেকোনো সময় মোয়াজ্জেম খান ও তার লোকজনের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হতে পারে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য জাফর খান রহমান বলেন, তাকে এর আগে প্রশাসন মাটি কাটার কারণে জরিমানা করেছিল। এখন সে রাতের আধারে কাটে এতে অনেক ফসলি জমি নষ্ট হতে পারে। ঘরবাড়ি বৃষ্টি হলে ভেঙে যাওয়ায় তোপের মুখে রয়েছে। এখন গ্রামবাসী অভিযোগ করছেন মোয়াজ্জেম খান ফসলি জমি থেকে মাটি কাটছেন। গ্রামবাসীর অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
কালকিনি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামিম হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করলে বা মামলা দায়ের করলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এছাড়া উপজেলা প্রশাসন আমাদের সহযোগিতা চাইলে সেটাও করব।
এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিংকি সাহা বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে আমরা সর্বদা তৎপর রয়েছি। কোথাও এ ধরনের ঘটনা ঘটলে, খবর পাওয়া মাত্র আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
রাকিব হাসান/আরকে