অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগম

রংপুরে শারীরিক প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) আধাবেলা ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, চার্জার রিকশা ও ভ্যানশ্রমিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে এ ধর্মঘটের ডাক দেয়।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, চার্জার রিকশা ও ভ্যানশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আকবর আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

শনিবার সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত রংপুর নগরে আধাবেলা সব ধরনের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, চার্জার রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি। 

ব্যাটারিচালিত চার্জার রিকশা ভ্যান জাতীয় শ্রমিক পার্টির মহানগরের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বাবু বলেন, ধর্মঘটের কর্মসূচি সফল করতে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে জানানো হয়েছে। মাইকিংয়ের পাশাপাশি ধর্মঘটের সমর্থনে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর লালবাগ থেক শাপলা চত্বর এলাকা পর্যন্ত একটি মিছিল বের করা হয়। 

কর্মসূচি সফল করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মহানগর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি হামিদুল ইসলাম বলেন, আমরা হতবাক। রিকশা চুরির অপবাদ দিয়ে প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামকে নিজের বাসায় নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছেন পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী। এ ঘটনা নির্মম ও হৃদয়বিদারক। হত্যা করে রিকশাচালক নাজমুলের মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে সেটাকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করছেন তিনি। আমরা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। 

গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর নগরীর আশরতপুর কোর্টপাড়ার একটি বাড়ি থেকে প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাড়িতে ভাড়া থাকেন রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত কনস্টেবল হাসান আলী। 

নিহত নাজমুল ইসলাম লালমনিরহাটের মুস্তফি অতিপুর এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে। তিনি রংপুরে আশরতপুর ঈদগাহপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। তার পায়ে সমস্যা থাকায় পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলীর গ্যারেজ থেকে নেয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়ায় চালাতেন। 

রিকশাটি মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) চুরি হয়ে যায়। এ নিয়ে রিকশাচালক নাজমুলকে দুই দফায় মারধর করেন হাসান আলী। এলাকাবাসীর সহায়তায় তাজহাট থানা পুলিশ ওই প্রতিবন্ধী রিকশাচালককে উদ্ধার করেন। 

পরে ছেড়ে দিলে কনস্টেবল হাসান আলী রাস্তা থেকে রিকশাচালক নাজমুলকে ধরে নিয়ে নিজ বাড়িতে বেধড়ক পেটায়। বুধবার দুপুরে স্থানীয়দের কাছে ওই ঘটনাকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কনস্টেবল হাসানের কোর্টপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে নাজমুলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে। 

এ ঘটনায় হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী। ওই দিনই এলাকাবাসীর তোপের মুখে স্ত্রীসহ কনস্টেবল হাসান আলীকে আটক করে পুলিশ। পরে রাতে নিহত নাজমুলের স্ত্রী শ্যামলী বেগম বাদী হয়ে হাসান ও তার স্ত্রীকে আসামি করে একটি মামলা করেন। পুলিশ ওই মামলাটি আত্মহত্যার প্ররোচনা হিসেবে রেকর্ড করেছে।

নিহতের স্ত্রী শ্যামলী বেগম বলেন, কনস্টেবল হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগম আমার স্বামীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তাদের বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার হলেও ঘটনাকে আত্মহত্যা বলা হচ্ছে। আমি এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

এদিকে বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার দিকে আসামিদের আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম। 

সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফজলে ইলাহী খান শুনানি শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) এ বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তাজহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আখতারুজ্জামান প্রধান বলেন, রিকশাচালক নাজমুলের ঝুলন্ত মরদেহ ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার স্ত্রীর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাথমিকভাবে মারধর ও আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে যদি হত্যার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় তাহলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নথিভুক্ত করা হবে।

এএম