ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কায় শরীয়তপুরবাসী
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকার পার্শ্ববর্তী জেলা হওয়া সত্ত্বেও সড়কের কাজ চলমান থাকায় এখনও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শরীয়তপুরবাসী। জেলার প্রেমতলা থেকে কাজীরহাট পর্যন্ত ২৪ ফুট এবং কাজীরহাট থেকে পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক পর্যন্ত ১২ ফুট চওড়া সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। এমনকি ওই সড়কে দুইটি সেতু ও ২৭টি কালভার্টের কাজ চলমান থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
রাজধানী থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী যাতায়াত করে শরীয়তপুরে। আসন্ন ঈদে যাত্রীর চাপ আরও বাড়লে দুর্ভোগও কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। তবে, সড়কগুলোর বেহাল দশা থাকা সত্ত্বেও রোববার (১৬ এপ্রিল) সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলেছে, ঈদে যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে জামতলার মোড়, টিএনটির মোড় ও রসের মোড়সহ সরু সড়কগুলোকে ঈদের আগেই চওড়া করা হবে।
বিজ্ঞাপন
জেলা বিআরটিএ অফিস জানিয়েছে, চলতি বছর শরীয়তপুরে ৫৪টি বাসের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে ১৩৫টি বাস। তবে, বাস মালিক গ্রুপ জানিয়েছে, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বাস মালিকরা অনুমোদন নিয়েছেন এসব বাসের। ঈদের আগে পরে সব কোম্পানি মিলিয়ে দুই শতাধিক বাস চলাচল করবে।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে আব্দুর রহমান নামে এক যাত্রী বলেন, আমরা দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছি। ঢাকা থেকে জাজিরা (পদ্মা সেতু) পর্যন্ত আসতে সময় লাগে ৩০-৩৫ মিনিট। কিন্তু সরু রাস্তা ও যানজটের কারণে আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে পদ্মা সেতু থেকে শরীয়তপুর পৌঁছাতে।
বাসচালক মাসুদ রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কের অবস্থা খুবই বেহাল। এই সড়কে গাড়ি চালাতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীরা গাড়িতে চড়তে ভয় পাচ্ছেন। ঈদ সামনে রেখে যাত্রীদের বাড়ি ফেরা শুরু হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমরা গাড়ি চালাই। আমাদের রাস্তা এত বেশি খারাপ যে, বাংলাদেশের ভেতর এর চেয়ে খারাপ রাস্তা আর আছে বলে আমার মনে হয় না।
শরীয়তপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি ফারুক তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতু চালুর পর শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামে একটি কোম্পানির ১৩৫টি গাড়ি শরীয়তপুর-ঢাকা মহাসড়কে চলাচল করে। শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। সেতু চালুর পর থেকে আমাদের শ্রমিকরা কষ্ট করে গাড়ি চালাচ্ছেন। যাত্রীরাও কষ্ট করছেন। ঈদে যাত্রীরা গাড়ি সংকটে ভুগবে না।
শরীয়তপুর জেলা সিএনজি-অটোরিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহকারী সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়ার খান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সমগ্র শরীয়তপুরে পাঁচ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করে, বর্তমানে রাস্তা-ঘাটের অবস্থা খুবই খারাপ। গাড়ি চলাচলের অনুপযোগী এই সব রাস্তা। গাড়ির যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তা নেই। রাতে গাড়িতে চুরি-ডাকাতি হয়। প্রসাশনের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন রাস্তার যাত্রী ও চালকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, শরীয়তপুর-জাজিরা সড়কে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। ঈদে যাত্রীর চাপ বাড়বে বলে চলমান কাজটিকে আমরা আরও বেগবান করছি। বিশেষ করে সরু রাস্তাগুলোকে চওড়া করার কাজ ঈদের আগেই শেষ করা হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) শরীয়তপুরের সভাপতি অ্যাড. মুরাদ হোসেন মুন্সী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের সময় আমরা দেখতে পাই অন্যান্য সময়ের তুলনায় একটু বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। ঈদে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে। বিশেষ করে পুলিশ প্রশাসনের যারা সড়কের দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের কাজ হবে যাত্রীসেবা নিশ্চিত করা। এছাড়া আমরা যারা সাধারণ যাত্রী আছি তাদের উচিত হবে অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে গাড়িতে না ওঠা।
শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র জানিয়েছেন, ঈদে যাত্রী হয়রানি বন্ধে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী ১৮ এপ্রিল থেকে শরীয়তপুর-পদ্মা সেতু সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ সময় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ছিনতাই ও ডাকাতিসহ কোনো প্রকার অপরাধ সংঘঠিত না হতে পারে সেজন্য সাদা পোষাকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা সড়কে অবস্থান করবেন। এমনকি রুট পারমিট ছাড়া কোনো গাড়ি সড়কে যাত্রী পরিবহন করতে পারবে না।
শরীয়তপুর জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সড়ক পরিদর্শন করেছে জেলা পুলিশ। যাত্রী হয়রানি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও ছিনতাইয়ের মতো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সে লক্ষ্যে জেলা পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এবিএস