'লাফ দিতে ২ সেকেন্ড দেরি হলে নিশ্চিত মারা যেতাম'
‘গার্ড ব্রেকের উপরে পাটি বিছিয়ে বসা ছিলাম তিনজন। আমি তো জানিই যে সোনার বাংলা আসবে চট্টগ্রাম থেকে। যেহেতু তাদের কোনো স্টপেজ নেই এখানে, সেটা মেইন লাইন দিয়ে চলে যাবে। কিন্তু হঠাৎ দেখি সোনার বাংলা ট্রেন বাঁক নিয়ে লুপ লাইনে চলে এসেছে। আমি এবং আমার আরএমডি ভাই দেখেছি। বিশ্বাস করেন দেখার সঙ্গে সঙ্গে একটা লাফ দেই। লাফ দিতে ২টা সেকেন্ড দেরি হলে নিশ্চিত আমরা তিনজন মারা পড়তাম।’
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে রোববার (১৬ এপ্রিল) ট্রেন দুর্ঘটনার পর এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সোনার বাংলা ট্রেনের ধাক্কা খাওয়া সেই মালবাহী ট্রেনের পরিচালক (ইনচার্জ) অভিজিৎ বিশ্বাস।
বিজ্ঞাপন
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমাদের ট্রেনটা ছিল লুপ লাইনে। ইফতারের সময় গার্ড ব্রেকের যে ভেতরটা, সেখানে একটু খোলা জায়গা রয়েছে, সেখানে আমরা তিনজন ইফতারে বসেছি। সবকিছু কাটাকাটি করে আজান হলে ইফতার করি। ইফতার শেষ করে সেখানেই বসা ছিলাম। সোনার বাংলা লুপ লাইনে আসার কথা নয়। এটা মেইন লাইন দিয়ে চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ লক্ষ্য করলাম সোনার বাংলা মেইন লাইন ছেড়ে লুপ লাইনে মোড় নিয়েছে। কালক্ষেপণ না করে লাফ দেই। ট্রেনের কী ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমি জানি না, আমি নিশ্চিত মারা যেতাম। মা-বাবার দোয়া আর সৃষ্টিকর্তার মেহেরবানিতে বেঁচে আছি।
প্রসঙ্গত, রোববার (১৬ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার হাসানপুর রেলওয়ে স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা মালবাহী ট্রেনে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ট্রেন। এতে সোনার বাংলা এক্সপ্রেসের ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় মালবাহী ট্রেনের পেছনের কন্টেইনার। আহত হন ২০-৩০ জন যাত্রী। আহতদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
এ ঘটনায় ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুমিল্লা জেলা প্রশাসন। অপরদিকে রেলওয়ে বিভাগ থেকেও ৪ সদস্য বিশিষ্ট আরেকটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি দুটি আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। ঘটনার পরে রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম এবং পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান। তবে, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
আরিফ আজগর/এবিএস