কাঠের সেতুতে ভোগান্তি কমলেও কাটেনি শঙ্কা
রংপুর মহানগরীর দামোদরপুর বড়ময়দান ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন ঘাঘট নদীর উপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি কাঠের সেতু। গ্রামের লোকজনের নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ হওয়ায় কমেছে শত বছরের ভোগান্তি ও দুর্দশা। তবে এখনো কাটেনি দুর্ঘটনার আশঙ্কা। ঘাঘটের দুই পাড়ের যোগাযোগের মেলবন্ধন হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা কাঠের এ সেতুটি এখন সিটি করপোরেশনের ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চলাচলের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে পরিণত হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন ঘাঘট নদীর উপর একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়েছে আসছেন তারা। কিন্তু কোনো জনপ্রতিনিধি কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের সেই দাবি আলোর মুখ দেখেনি। এ কারণে গ্রামের লোকেরা বাধ্য হয়ে ব্যক্তি উদ্যোগ ও নিজস্ব অর্থায়নে নদীর উপর দিয়ে পারাপারের জন্য কাঠ-বাঁশ ও গাছের গুড়ি দিয়ে একটি অস্থায়ী সেতু নির্মাণ করেছেন। তবে শুকনো মৌসুমে পারপার স্বাভাবিক হলেও বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সেতুটি দিয়ে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ মার্চ দামোদরপুর বড়ময়দান ঈদগাহ মাঠ কমিটির ব্যবস্থাপনায় নির্মিত কাঠের সেতুটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। অস্থায়ী এই সেতু উদ্বোধনকালে সেখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। এই কাঠের সেতুটি দিয়ে এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ যাতায়াত করে।
স্থানীয় কৃষক জাকির হোসেন বলেন, এর আগে সেতু না থাকায় দুই-তিন কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে চলাচল করতে হতো। এখন সেই ভোগান্তি নেই। সিটি করপোরেশনের ১২ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষজন নতুন সেতু দিয়ে পারপার করছে। এটা নির্মাণ হওয়ায় আমাদের কষ্ট ও দুর্ভোগ অনেকাংশে কমে এসেছে।
বিজ্ঞাপন
ঘাঘট নদীরপাড় ঘেষে সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানে দুই ওয়ার্ডের কোমলমতি শিশুরা পড়ালেখা করে। এছাড়া একটি মাদ্রাসা নির্মাণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে এলাকাটিতে। কৃষি নির্ভর এই ওয়ার্ডের বাসিন্দারা প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্বিঘ্নে সেতু দিয়ে চলাচল করে। তবে শিশু-কিশোরদের পারাপার নিয়ে কিছুটা দুর্ঘটনার আশঙ্কায় থাকতে হয় অভিভাবকদের।
দামোদুরপুর গ্রামের কলেজছাত্র রবিউল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে সাইকেল চালিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে শহরে যেতাম। এখন আর সেই কষ্টটা হচ্ছে না। কাঠের সেতু দিয়ে যাতায়াত করছি। তবে সেতুর উপর দিয়ে বাইসাইকেল চালানো যায় না, একটু নড়বড়ে মনে হয়। হেঁটে হেঁটে সেতু পার হতে হয়, এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে। যদি স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণ করা যায়, তাহলে আমাদের সবাই উপকৃত হব, একই সঙ্গে দুর্ঘটনার শঙ্কাও থাকবে না।
ঘাঘটপাড়ের বাসিন্দা হাশেম আলী বলেন, একটা ব্রিজের জন্য আমরা কতজনকে অনুরোধ করেছি, কিন্তু কেউই কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের এমপি সাহেব তো এলাকার মানুষ চিনে না। কারণ সে কখনোই এই গ্রামে আসেনি। আমরাও তাকে খুঁজে পাই না। আর সিটি মেয়র আমাদের এখানে আসেন, দেখেন কিন্তু তিনি এখনো আমাদের একটা স্থায়ী ব্রিজের জন্য কিছুই করেননি। তবে আশ্বাস দিয়েছেন।
একই গ্রামের মনতাজুল ইসলাম বলেন, আমরা ছোট থেকে দামোদুরপুর বড় ময়দান ঈদগাহ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করি। কিন্তু ব্রিজ না থাকার কারণে নদীর ওই পাড়ের মানুষ এখানে আসতে পারতো না। অনেক দূর ঘুরে এখানে আসতে হতো। এখন আর সেই কষ্ট নেই। এই কাঠের সেতু হওয়াতে দুই ওয়ার্ডের মানুষের একটা যোগসূত্র তৈরি হয়েছে। এখন নদীর উপর একটা স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা জরুরি।
এ বিষয়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মকবুল হোসেন ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজলে এলাহী জানান, সেতু নির্মাণের বিষয়টি সিটি মেয়রকে অবগত করা হয়েছে। মেয়র বর্তমান কাঠের সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সেখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, সেখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করা হবে। কারণ এটি স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন সেখানে একটি কাঠের সেতু রয়েছে। আমি নিজেই সেখানে গিয়েছিলাম। কথা দিয়েছি আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণ করে দিব ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, সেখানে সেতু নির্মাণের জন্য যা যা করণীয় সবকিছু করা হবে। ইতোমধ্যে প্রকৌশল শাখায় কথা বলা হয়েছে। সেতুর অবকাঠামো ডিজাইন তৈরিসহ টেন্ডার ও অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যত দ্রুত সম্ভব সেখানে একটি স্থায়ী সেতু নির্মাণের ব্যবস্থা করতে আমরা চেষ্টা করছি।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এবিএস