ফরিদপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তার বদলি হওয়ায় ২৮ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে জন্মনিবন্ধন সংশোধনীর সব কার্যক্রম। ফলে ফরিদপুরের কোনো পৌরসভা ও ইউনিয়নে সংশোধনের আবেদন জানিয়েও সনদ না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শতশত আবেদনকারী।

বিভিন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়নের দায়িত্বরত ব্যক্তি এবং সংশোধনীর আবেদন করা অসংখ্য ব্যক্তি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অবস্থিত স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালকের (ডিডিএলজি) কার্যালয়ে ধরনা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন সেবা নিতে আসা এসব মানুষ।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য সংশোধনীর বিষয়বস্তু অনুযায়ী অনলাইনে ৫০ থেকে ১০০ টাকা ফি দিয়ে স্ব স্ব পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদে আবেদন করতে হয়। এ আবেদনটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ডিডিএলজি শাখায় পাঠায় ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার কম্পিউটার অপারেটররা। ওই শাখা থেকে আবেদনপত্রটির যাবতীয় তথ্য যাচাই করা হয়। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে সেটি গ্রহণ করে কোড নম্বর দেওয়া হয়। ওই কোড নম্বর পাওয়ার পর পৌরসভা কিংবা ইউপি চেয়ারম্যানগণ সেটি নিবন্ধন করেন। পরে সেটার প্রিন্ট বের করে জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে আসা ব্যক্তিকে হার্ডকপি আকারে সনদ সরবরাহ করা হয়।

ফরিদপুর পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সেখানে জন্মনিবন্ধন সংশোধনী বন্ধ রয়েছে গত ২০ মার্চ থেকে। ১৯ মার্চ তারা সর্বশেষ ডিডিএলজি শাখার কোড পাওয়ায় কাজ করতে পেরেছেন। এরপর থেকে কোড না পাওয়ায় সোমবার (১৭ এপ্রিল) পর্যন্ত সংশোধনী কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন তারা। ফলে গত ২৮ দিনে জন্মনিবন্ধনের কোনো সংশোধনী সেবা গ্রহীতাদের সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ফলে জন্মনিববন্ধন সংশোধন করতে আসা ব্যক্তিদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। জন্মনিবন্ধন সংশোধনীর ছাড়পত্র না পাওয়ায় অনেকে পাসপোর্টের জন্যও আবেদন করতে পারছেন না। এ পর্যন্ত ফরিদপুর পৌরসভার এ জাতীয় প্রায় ৪০০টির মত আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই নতুন নতুন আবেদন জমা পড়ছে, বাড়ছে সংখ্যাও।

এ সমস্যা শুধু ফরিদপুর পৌরসভার নয়, এ সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছে জেলার ছয়টি পৌরসভা ও ৮২টি ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক ব্যক্তি। বোয়ালমারী পৌরসভায় জন্মনিবন্ধনের কাজ করেন মো. তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত ২৮ দিন ধরে জন্মনিবন্ধন সংশোধনীর কোনো কোড ডিডিএলজির কার্যালয় থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। বোয়ালমারীর শতাধিক ব্যক্তির আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা নিবন্ধন করতে পারছি না।

এ বিষয়ে মধুখালী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মোরশেদ রহমান বলেন, আইডি কোড না পাওয়ায় মধুখালী থেকে গত ২৮ দিন ধরে জন্মনিবন্ধন সংশোধনী সংক্রান্ত কোনো কাজ করা যাচ্ছে না।

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসূতি ইউনিয়নের বাউতিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা কাইয়ুম মোল্লা জানান, তার মেয়ে তন্নীর নামের বানান সংশোধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলেন। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানানো হয়েছে সংশোধনের কাজ আপাতত বন্ধ রয়েছে। খোলা হলে জানানো হবে।

ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জন্মনিবন্ধন সংশোধনের কাজটি করতেন ফরিদপুর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (ডিডিএলজি) আসলাম মোল্লা। তবে সম্প্রতি তিনি বদলি হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় এ কাজ বন্ধ রয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ডিডিএলজির দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবির।

ডিডিএলজি শাখা সূত্রে জানা যায, বদলি হয়ে যাওয়া ডিডিএলজি আসলাম মোল্লা জন্মনিবন্ধন সংশোধনীর কাজটি দেখভাল করতেন। এজন্য তিনি একটি আইডি ও গোপন নম্বর ব্যবহার করতেন। তবে তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার পর এ গোপন কোডটি  কাউকে দিয়ে যাননি। ফলে এ সংক্রান্ত কাজ বন্ধ রয়েছে।

জানতে চাইলে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবির বলেন, আমরা এ সংশোধনীর জন্য নতুন একটি গোপন কোডের জন্য ঢাকার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের জন্মনিবন্ধন রেজিট্রি বিভাগে লিখিতভাবে জানিয়েছি। ওই বিভাগ থেকে ১২ এপ্রিল একটি নতুন গোপন কোড নম্বর দেওয়া হয়। তবে তাতে কাজ হয়নি।

জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়াছিন কবির আরও বলেন, এ বিষয়টি অনেকদিন হয়ে গেছে। যেভাবেই হোক দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা আমরা ঠিক করতে পারবো বলে আশাবাদী।

ফরিদপুর থেকে বদলি হয়ে যাওয়া স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক আসলাম মোল্লা বলেন, আমি অন্য একটি জেলায় নতুন দায়িত্ব পেয়ে সেখানে এসেছি। আমার কারণে জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ থাকবে কেন? সেটা আমার বোধগম্য নয়। আমি সমস্ত দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে নতুন কর্মস্থলে এসে যোগ দিয়েছি।

জহির হোসেন/এবিএস