মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ইফতার সামগ্রী তৈরি নিয়ে স্বামী ও শ্বশুরের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধু। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে অভিযুক্ত শ্বশুর ও স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, গতকাল সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে কুলাউড়ায় এক গৃহবধূ নির্যাতনের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নির্যাতিত গৃহবধূর শ্বশুর মো. শফিক মিয়া (৬৩) ও স্বামী আব্দুস সালামকে (৩২) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, কুলাউড়া থানার পৃথিমপাশা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূর শ্বশুর সফিক মিয়া তার পুত্রবধূকে অশ্লীল গালি-গালাজ করে মারধর করতে করতে একটি বাড়ির উঠান থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভুক্তভোগীর বড়ভাই বাবুল মিয়া এই ঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, চার বছর আগে ভুক্তভোগীর সঙ্গে সুলতানপুর গ্রামের শফিক মিয়ার ছেলে আব্দুস সালামের বিয়ে  হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে ১টি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকেই ভুক্তভোগীর স্বামী আব্দুস সালাম যৌতুকের জন্য তাকে শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতে থাকেন। ভুক্তভোগীর পরিবার আর্থিকভাবে দুর্বল হওয়ার কারণে যৌতুকের দাবি পূরণ করতে পারেননি।

ভুক্তভোগীর ভাই বাবুল মিয়া জানান, গত ১৬ এপ্রিল ইফতারের শরবতের প্যাকেট কাটাকে কেন্দ্র করে ভুক্তভোগীর সঙ্গে স্বামী আব্দুস সালাম ও তার দেবর রুমান মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভুক্তভোগীকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এলোপাতাড়ি মারধর করে। পরের দিন সকালে ভুক্তভোগীকে তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুক বাবদ এক লক্ষ টাকা এনে দিতে বলে। সে যৌতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করতে থাকে। পরবর্তীতে জীবনের ভয়ে প্রতিবেশী জ্যোৎস্না বেগমের বাড়িতে আশ্রয় নিলে তার শ্বশুর এবং স্বামী সেখান থেকে ভুক্তভোগীকে অশ্লীল ভাষায় গালি-গালাজ করতে করতে চুলের মুঠি ধরে টেনে হিঁচড়ে বাড়িতে নিয়ে যায়।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনার খবর পেয়ে ভুক্তভোগীর ভাই এবং স্বজনরা তাকে উদ্ধার করতে গেলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাদেরও গালি-গালাজ করে বাসা থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে কুলাউড়া থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, আজ সুলতানপুর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ভুক্তভোগীর স্বামী আব্দুস সালামকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আব্দুস সালামকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর ঘটনার মূল হোতা শফিক মিয়াকে গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে। শেষে গোপন তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামি শফিক মিয়াকে মৌলভীবাজার সদরের একাটুনা গ্রামের তার মেয়ের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওমর ফারুক নাঈম/এবিএস