শিল্প সমৃদ্ধ গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের মাওনা গ্রাম। গ্রামের উঁচু দালান কোঠার ভিরে খুপড়ি একটি টিনের ছাপরা ঘরে মেয়ে-স্বামীসহ বাস করেন রুমা আক্তার।

হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়া রুমার ভাগ্য তার সহায় ছিল না। শিশু বয়সেই বাবা তাইজুদ্দিন মারা যান। প্রতিবেশীর বাড়িতে কাজ করে রুমাকে আদর যত্নে বড় করে তুলেন মা। লেখাপড়ার সুযোগ বঞ্চিত হলেও কিশোর বয়স থেকেই জীবিকার তাগিদে  শিল্পকারখানার কাজ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে সংসার করেন এবং এক কন্যা সন্তান আসে সংসারে।

স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখেই চলছিল তার দিনকাল। এর মধ্যেই ৭ বছরে পূর্বে এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পায়ের ফিমারসহ ভেঙে যায়। ঘরবন্দি হয়ে পড়েন তিনি। সহায় সম্বল যা ছিল তা দিয়েও চিকিৎসা পূর্ণতা পায়নি। অভাব জেঁকে ধরায় মাঝপথে চিকিৎসা থেমে যাওয়ায় এখন দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে। চিকিৎসার অভাবে যন্ত্রনার বিছানায় বসে কান্নায় কাটে তার দিন। পায়ের যন্ত্রনায় এতদিন ধরে চিৎকার চেঁচামেচি করলেও চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়ে উঠেনি। মন গলেনি এলাকার কারও।

রুমা আক্তার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা গ্রামের তাইজুদ্দিনের মেয়ে। স্বামীর কোনো সহায় সম্বল না থাকায় মায়ের সঙ্গে খুপড়ি এক টিনের ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করেন তিনি। তার স্বামী মঞ্জুরুল হক স্থানীয় একটি কারখানায় স্বল্প বেতনে চাকরি করেন।

রুমা আক্তারের স্বামী মঞ্জুরুল হক বলেন, আমি আট হাজার টাকা বেতনে কাজ করি। এ টাকা দিয়ে তো সংসারই চলে না। চিকিৎসা কীভাবে করবো? সহায় সম্বল সব শেষ হয়েছে আগে চিকিৎসা করে। পুরো চিকিৎসা শেষ করতে পারেনি। এখন তো হয়েছে মহাবিপদ। একটু ওষুধ কিনে যে খাবেন সে ব্যবস্থাটাও নেই। নিজের অসহায়ত্ব ও যন্ত্রনায় স্ত্রীর কান্নায় তার পরিবারে যে বিপর্যয় চলছে অনেকটা। জরুরিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা না হলে হয়তো আর স্ত্রীকে বাঁচাতে পারবো না। 

রুমা আক্তারের একমাত্র মেয়ে উর্মি আক্তার স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মায়ের দেখভাল ও রান্নাসহ সব কাজ এ তাকেই করতে হয়।

উর্মি আক্তার বলে, তার মা সারাক্ষণ পায়ের ব্যথায় কান্নাকাটি করেন। রাত হলেই কান্না বাড়ে। আশপাশের মানুষের ঘুমের ব্যঘাত হয় দেখে অনেকে অনেক কথা বলেন। তবে চিকিৎসার ব্যবস্থার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। 

রুমা আক্তার বলেন, ৭ বছর ধরে ব্যথার যন্ত্রনায় বিছানায় কাতরাচ্ছি। দরিদ্র হওয়ায় চিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়নি। আর পারছি না। এ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই।

এ বিষয়ে মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য হাফেজ মো. শামীম মৃধা জানান, দুদিন আগে বিষয়টি আমি জেনেছি। এরপর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খোকনসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করে রুমার চিকিৎসার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।


শিহাব খান/এমএএস