স্বামীর বিরুদ্ধে করা যৌতুক মামলা তুলে না নেয়ায় প্রকাশ্যে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার গৃহবধু ইয়াসমিন আক্তার (২৩)। শ্বশুরবাড়ির লোকজন কর্তৃক মারধরের সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।

এ ঘটনার পর নির্যাতিতার পরিবারকে এলাকা ছাড়তেও নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। নিরুপায় হয়ে ময়মনসিংহের আদালতে মারধরের আরেকটি মামলা করেছেন নির্যাতিতার বড় ভাই।

সোমবার (২২ মার্চ) দুপুরে ময়মনসিংহের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত পাড়ায় কথা হয় নির্যাতিতা ইয়াসমিন ও তার ভাই মাহবুবের সঙ্গে। 

ঢাকা পোস্টকে ইয়াসমিন জানান, ২০১৮ সালে পাশের এলাকা নওপাড়া মগডুলা গ্রামের যুবক পাভেল মিয়াকে প্রেম করে বিয়ে করেন ইয়াসমিন। সম্পর্কে তারা আপন মামাতো-ফুফাতো ভাই-বোন। প্রথমে সবকিছু ঠিকঠাক থাকলেও মাসখানেক পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য নির্যাতন শুরু করে স্বামী।

ইয়াসমিন বলেন, আমার স্বামী আমার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা চায়। টাকা নিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতো সে। মারধর থেকে বাঁচতে কয়েক ধাপে তাকে পাঁচ লাখ টাকাও দিয়েছি তাকে। কিন্তু তাতেও মারধর থেকে রক্ষা পাইনি আমি।

তিনি জানান, এক পর্যায়ে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন গেল বছর নভেম্বরে। সেই মামলায় গেল ১ মার্চ গ্রেফতার হয় স্বামী পাভেল। এরপর থেকেই মামলা তুলতে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকে। তবে মামলা না তোলায় গেল ১০ মার্চ তাকে পেয়ে একটি ক্ষেতের আইলে প্রকাশ্যে পেটান আনোয়ারুল। সঙ্গে অংশ নেন তার স্ত্রী, ছেলে আর মেয়ে। তখন তারা বলতে থাকে 'মামলা না তুললে তরে শেষ কইরা দেম, যোগ করেন ভুক্তভোগী এ গৃহবধূ।  

ধারণকৃত নির্যাতনের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর থেকে নির্যাতিতাকে দেয়া হচ্ছে নানা হুমকি। এ ঘটনায় প্রতিকারের আশায় গেল ১৮ মার্চ ময়মনসিংহ আদালতে আরেকটি মামলা করেন নির্যাতনের শিকার গৃহবধূর ভাই মাহাবুব। সোমবার সেই মামলার খোঁজ নিতে আদালতে আসেন দুই ভাই-বোন।  

নির্যাতিতার ভাই মাহবুব আলম বলেন, আসামিরা আমাদের প্রাণনাশের হুমকি ধামকি দিচ্ছে। এখনও কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় প্রাণনাশের আশংকায় এখন আমরা বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছি। এ ঘটনায় আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এভাবে নারীর প্রতি সহিংসতা আমরা কোনোভাবেই বরদাশত করব না। অপরাধীদের ধরতে পুলিশকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। 

উবায়দুল হক/এমএএস