পাট শাক আর সোডা দিয়ে রান্না করা এক ধরনের খাবার ‘শোলকা’। এটা বাহের দেশখ্যাত রংপুর অঞ্চলের নিজস্ব ঐতিহের একটি প্রিয় খাবারের নাম। রংপুর অঞ্চল ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে জনপ্রিয় এই ‘শোলকা’ নামক খাবারটি তেমন পরিচিত নয়।

জনপ্রিয় এই খাবার রংপুরের বদরগঞ্জ, পীরগঞ্জ, তারাগঞ্জ, পীরগাছা, মিঠাপুকুর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়াসহ রংপুর বিভাগের আশপাশের কিছু কিছু উপজেলায় সুস্বাদু খাবার হিসেবে শোলকা রান্না হয়ে থাকে। এই শোলকা দিয়ে দ্রুত খাবার টেবিলের খাবার সাবাড় করা সম্ভব।

শাক দিয়ে ‘শোলকা’ রান্না করা হলেও ভিন্ন স্বাদের এই খাবার তৈরির প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। অন্যসব শাকের মতো শোলকার রান্না এক নয়। শোলকা রান্নার প্রধান উপকরণ পাট শাকের পাতা আর খাবার সোডা।

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের মাদরাসাপাড়া গ্রামের সোহানা ইসলাম সেতু রান্নায় পটু। তার সঙ্গে শোলকা রান্নার কলাকৌশল নিয়ে কথা হলে তিনি জানান, শোলকা মূলত পাট চাষের সময় বেশি রান্না করা হয়। এসময় হাতের নাগালেই পাট শাকের পাতা বেশি পাওয়া যায়।

এই গৃহিণী জানান, শোলকা রান্নার প্রধান উপকরণ পাটশাকের পাতা। এই পাতা কাটার ধরনটাও একটু ভিন্ন। পাট শাকের পাতা গুছিয়ে গুছিয়ে মুঠো ভর্তি করে নিয়ে কুচি কুচি করে কাটতে হয়। পাট শাক যেহেতু একটু তিতে হয় তাই এর তিতেভাব কাটানোর জন্য আরও পাঁচ সাতটা শাকের পাতা একটুখানি করে দেওয়া হয় শোলকার উপকরণ হিসেবে। এতে লাউশাকের পাতা, কুমড়োশাকের পাতা, পুইশাকের পাতা, কচুর পাতা, সজনে ডাটার পাতা, নাপাশাকের পাতাসহ হাতের নাগালে যা পাওয়া যাবে সেই শাকের পাতা কুচি কুচি করে এতে দেওয়া যাবে।

শোলকার অন্যতম আরেকটা উপাদান হল খাবার সোডা। যা ছাড়া শোলকা রান্না করলে শোলকাই হবে না জানিয়ে সেতু বলেন, শোলকাকে পিচ্ছিল করার জন্য এক চিমটি খাবার সোডা দেওয়া হয়। প্রথমে একটু পানি গরম করতে করতে সেখানে পরিমাণ মতো লবণ, কাঁচা মরিচ, রসুন এবং সোডা দিয়ে নেড়ে, কেটে রাখা পাটশাক দিতে হয়। অল্প একটু আদা কুচি। ১০ থেকে ১৫ মিনিট হালকা আচে নাড়তে হয়। এভাবে রান্না করা প্রিয় ‘শোলকা’।

মজাদার এই শোলকা রান্না করতে কোনো হলুদ, পেঁয়াজ, তেলের ব্যবহার হয় না। তবে শোলকার মধ্যে কাঁঠালের বিচি দিলে এর স্বাদ হয় আরও অসাধারণ হয় বলেও জানান এই রাঁধুণী।

মজাদার শোলকা আঞ্চলিক খাবার হলেও এটি উচ্চ ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ। বহুপদের শাকে তৈরি শোলকার প্রচলন রংপুর ও কুড়িগ্রামে হলেও এখন পুরো উত্তরাঞ্চলেই এর ব্যাপ্তি। শাকে শাকে রান্না করা শোলকার স্বাদ দেশের বাইরেও রয়েছে। ভারতের চ্যাংরাবান্ধা, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার ও আসামের বেশ কিছু এলাকাতে শোলকা বেশ জনপ্রিয় খাবার।

এদিকে রংপুরের গ্রামীণ জনপদের জনপ্রিয় এই খাবার এখন সহজেই পাওয়া যায়। দিন বদল হাওয়ার সাথে সাথে আধুনিকতার কাছে ‘শোলকা’ যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ একটা সময় ছিল এ অঞ্চলে কারও বাসায় মেহমান বেড়াতে এলে খাবারের তালিকায় এই শোলকাও থাকতো।

বর্তমান শহুরে জীবনে এই খাবার নতুন প্রজন্মের কাছে খুব একটা পরিচিত না হলেও গ্রামীণ জনপদে এখনো রয়েছে শোলকার কদর। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস