পড়ালেখা জানেন না বাদী, ভুলে জেল হাজতে ইউপি সদস্য
ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ঢালী ছবি: সংগৃহীত
শরীয়তপুরে এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের অভিযোগ এনে পালং মডেল থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীর বাবা। পড়ালেখা না জানায় ভুল করে তিনি মামলায় আসামি হিসেবে সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ০৭ নং ওয়ার্ড সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিজান ঢালীর নাম দেন। এরপর মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে মামলায় অভিযুক্ত ছয় আসামির সঙ্গে দু’দিন ধরে জেল হাজতে রয়েছেন ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান।
গতকাল শনিবার (৬ মে) মামলা দায়েরের পর মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। রোববার (৭ মে) সন্ধ্যায় ঢাকা পোস্টকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী লোকমান বয়াতি ও নির্যাতিতা ওই কিশোরী।
বিজ্ঞাপন
মামলার বাদী লোকমান বয়াতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পড়ালেখা জানি না বলে এই গুরুতর ভুল হয়েছে। মিজান ঢালীর জায়গায় মিজান মাতবরের আসামি হওয়ার কথা ছিল।
মামলার এজাহারে দেখা যায়, সাত নম্বর আসামির পরিচয়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ্য করা হয়েছে রুদ্রকর ইউপি সদস্য মিজান ঢালীর নাম। তার বাবার নাম বাদশা ঢালী।
বিজ্ঞাপন
লোকমান বয়াতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউপি সদস্য মিজান ঢালীর পরিবর্তে আসামি হওয়ার কথা ছিল এবাদুল মাতবরের ছেলে মিজান মাতবরের। কিন্তু আমি ভুল করে ইউপি সদস্য মিজান ঢালীকে আসামি করেছি। আমার মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনায় মিজান ঢালী জড়িত নন। আমি পড়ালেখা না জানায় এই ভুল হয়েছে। সরকারের নৈশ স্কুলে আমি কেবল নিজের নাম সই করা শিখেছি। আমি পড়তে বা লিখতে জানি না।
তিনি বলেন, আমি আদালতে প্রার্থনা করব, ইউপি সদস্য মিজান ঢালীর পরিবর্তে এবাদুল মাতবরের ছেলে মিজান মাতবরকে আসামি করার জন্য। আমি থানায় গিয়ে ঘটনা খুলে বলার পর আমাকে একজন এসআই কাগজে লিখে দিয়েছেন, আমি সেই কাগজ নিয়ে কম্পিউটারের দোকানে গিয়ে লিখে এনে সই করেছি। পড়ালেখা জানলে এই ভুল করতাম না। ওই এসআইয়ের নাম আমি জানি না। বিষয়টির জন্য আমার খুব খারাপ লাগছে। তারপরও বিষয়টি জানার পর আমি থানার ওসিকে বলেছিলাম নামটি কেটে দিতে। কিন্তু ওসি আমাকে জানিয়েছে, এটা এখন সম্ভব নয়। পরবর্তীতে সংশোধন করে দেওয়া হবে।
ভুক্তভোগী ওই কিশোরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাশবিক নির্যাতনের সময় ইউপি সদস্য মিজান ঢালী ছিলেন না। ওই সময় মিজান নামে অন্য একজন ছিলেন। মিজান মাতবর নামে ওই লোক আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছে। সে নির্যাতনের ভিডিও করেছে।
ওই কিশোরীর ফুপু রজিনা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ভাতিজিকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করার কিছুক্ষণ পর এসেছিলেন ইউপি সদস্য মিজান ঢালী। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন। মনির নামে এক লোক মিজান ঢালীর সঙ্গে চলাফেরা করেন। মনির ৪-৫ জন লোক নিয়ে এসে সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ঘটনাস্থল থেকে আমার ভাতিজি ও তার বান্ধবীকে উদ্ধার করেছে। আমরা চেয়েছিলাম পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে ভাতিজিকে উদ্ধার করুক। কিন্তু মেম্বারের লোকজন এসে উদ্ধার করেছে।
বাদী লোকমান বয়াতির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গণধর্ষণে অভিযুক্ত এবাদুল মাতবরের ছেলে মিজান মাতবর শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের চরসুন্ধি ধুলপাহাড় গ্রামের বাসিন্দা। সে তার নানা করম আলী সরদারের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে।
এদিকে ঘটনার পর থেকে পালিয়ে থাকায় মিজান মাতবরের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ইউপি সদস্য মিজানুর রহমান ঢালীর ভাই দুলাল ঢালী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বাবার নাম আবুল বাশার ঢালী। কিন্তু মামলার এজাহারে বাবার নাম লেখা হয়েছে বাদশা ঢালী। আমার ভাইকে মিথ্যা মামলায় পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। মামলার বাদীও তা স্বীকার করেছেন। আমার ভাইয়ের একটা মাত্র মেয়ে। আমরা পরিবারের লোকজন অনেক চিন্তায় আছি। ধর্ষণের মতো ইস্যুতে আমার ভাইয়ের নাম জড়িয়ে পরিবারের মান-সম্মান ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। আমার ভাই মামলার বাদীর ভাষ্যে নির্দোষ। আমি আমার ভাইয়ের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে পালং মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আক্তার হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা থানায় কোনো এজাহার লিখি না। মামলার বাদী বাইরের কম্পিউটার দোকান থেকে টাইপ করে লিখে এনে সই করে এজাহার জমা দিয়েছেন। মামলায় উল্লিখিত আসামিদের গ্রেপ্তার করে আমরা জেল হাজতে পাঠিয়েছি। এছাড়া ইউপি সদস্য মিজান ঢালী ঘটনাস্থলে থেকে নির্যাতিত পরিবারকে বলেছেন, এই ঘটনার বিচার করা হবে। মেম্বার হিসেবে সে বিষয়টি দেখবেন। তবে ধর্ষণের বিচার করার ক্ষমতা ইউপি সদস্য রাখেন না। এসব কারণে পুলিশ তাকে বড় অপরাধী মনে করছে।
সাইফুল ইসলাম/কেএ