জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলে বিপাকে ফরহাদ
ফরহাদ হোসেন সাগর
‘আমার পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য পরিবারের নেই। তারপরও নিজের চেষ্টা থেকে অনার্সে ভর্তি হয়েছি। অনেক কষ্টে টাকা যোগাড় করে ফরম পূরণ করেছি। প্রথম বর্ষের সবগুলো পরীক্ষা দিলাম কিন্তু ফলাফলে একটি বিষয়ে আমাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। পরে পরীক্ষাকেন্দ্র ও কলেজে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তুলে দেখি আমার নয়, ভুল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখন এই ভুলের দায় কে নেবে? আমার তো সেই সামর্থ্য নেই যে গাজীপুরে গিয়ে সব কিছু ঠিক করে নিয়ে আসব।’
চোখে মুখে হতাশা নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন অনার্সপড়ুয়া ফরহাদ হোসেন সাগর। তিনি রংপুরের কাউনিয়া কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সবগুলো পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পরও অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে তাকে এক বিষয়ে অনুপস্থিত দেখানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৯ মে) দুপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুলের কারণে সৃষ্ট ফলাফল বিপর্যয় নিয়ে নিজের অসহায়ত্বে কথা বলছিলেন ফরহাদ হোসেন সাগর। অনার্স ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০২২ সালের ১৭ আগস্ট তারিখে অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিলেও তাকে অনুপস্থিত দেখিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।
ফরহাদ হোসেন বলেন, বাবা অসুস্থ, মা সেলাই মেশিনে টুকটাক কাজ করেন। চার ভাইয়ের মধ্যে আমি সবার বড়। সংসার চালাতে পরিবারকে আমাকেই বেশি সহযোগিতা করতে হয়। আমি একটি কোচিং সেন্টারে কম্পিউটার অপারেটরের কাজ করতাম। তা দিয়েই টেনেটুনে সংসার চলত। নিজের পড়ালেখার পাশাপাশি বাকি তিন ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতাম। এই কষ্টের মধ্যেই অনার্স প্রথম বর্ষের ফরম পূরণ করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলাম। মীরবাগ ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রে বেশ ভালোভাবেই সবগুলো পরীক্ষা দিয়েছি।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে যখন ফল প্রকাশ করা হলো আমাকে ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ বিষয়ের পরীক্ষায় অনুপস্থিত দেখিয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের সঙ্গে আমি যোগাযোগ করেছি। তাদের পরামর্শে উপস্থিতি শিট সংগ্রহ করে দেখলাম এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুল। এ রকম নাকি হরহামেশাই হয়। আমি তো এমনিতেই কষ্ট করে পরীক্ষা দিলাম। এখন এই ভুলের দায় সামলাবো কি করে?
ফরহাদ হোসেন জানান, এই ভুল সংশোধন করতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান কার্যালয় গাজীপুরে যেতে হবে। কিন্তু তার কাছে যাতায়াত ও সেখানে থাকা-খাওয়ার মতো টাকা নেই। আর গাজীপুর যাওয়া-আসা, সেখানে থেকে সংশোধন করা অনেক টাকার দরকার। কোচিং সেন্টারে যে কাজটা করতেন, সেটাও এসএসসি পরীক্ষার কারণে বন্ধ রয়েছে।
এই শিক্ষার্থী বলেন, এ রকম সমস্যার ক্ষেত্রে যদি ই-মেইল কিংবা অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুবিধা থাকত, তাহলে আমি উপকৃত হতাম। আমাকে এই সমস্যায় পড়তেও হতো না। আমাদের দেশ তো এখন ডিজিটাল হয়েছে। সব কিছুই সহজীকরণ হচ্ছে। তাহলে এমন সমস্যার সমাধানে আবেদন প্রক্রিয়াটাও অনলাইনে হওয়া দরকার। এটা হলে আমার মতো অন্যরাও এমন সমস্যার দ্রুত সমাধান পাবেন।
রংপুর মহানগরীর ৫নং ওয়ার্ডের ময়নাকুটি এলাকায় বাড়ি ফরহাদ হোসেন সাগরের। অসুস্থ বাবা লুৎফর রহমান ছেলের এমন সমস্যায় পড়ার বিষয়ে বলেন, আমি নিজেই অসুস্থ। ছেলেটা খুব কষ্ট করে পড়ালেখা করছে। সংসারটাও চালাচ্ছে তাতে আবার চাকরিটাও নেই। কীভাবে ঢাকা গিয়ে ঠিক করবে। ভাত খাইতেই হিমশিমে আছি। কেউ যদি একটু সহযোগিতা করে। তাইলে হয়তো ছেলেটার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে কাউনিয়া কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক শফিকুল ইসলাম বলেন, এই ভুলে আমাদের কিছু করার নেই। যে কেন্দ্রে পরীক্ষা হয়েছে সেখানেও তাদের কোনো ভুল নেই। এটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা কাজ করেন তাদের দ্বারা হয়েছে। কলেজ থেকে সংশোধনে আমাদের কিছু করার নেই। তবে আমি তাকে কিছু আর্থিক সহায়তা করতে পারি, সেটাও অতি সামান্য।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর