বরিশালে রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ
ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী
বরিশাল সিটি নির্বাচনে নিযুক্ত রিটার্নিং অফিসার হুমায়ূন কবিরের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন ইসলামী আন্দোলন ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী।
এরমধ্যে জাতীয় পার্টি প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস নির্বাচন কমিশনে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। মঙ্গলবার (৯ মে) রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
নির্বাচন অফিস থেকে জানা গেছে, ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে বুধবার (১০ মে) সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে স্ব শরীরে বরিশাল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হয়ে লিখিত ও মৌখিক ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। মূলত শোডাউন করে আচরণবিধি লঙ্ঘন করায় তাকে এই নোটিশ দেওয়া হয়। ৮ মে রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, মেয়র প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম সোমবার বিশাল শোডাউন নিয়ে নগরীতে প্রবেশ করেন। এ সময় তার অনুসারীরা হাতপাখাও বহন করে। প্রতীক বরাদ্দের আগে এমন মিছিল, শোডাউন বিধিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
বিজ্ঞাপন
তবে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে পাল্টা যুক্তি দেওয়া হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের মিডিয়া সেলের সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, নির্বাচন শুরু হওয়ার আগে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর ওপর এভাবে বিধি প্রয়োগ বিস্ময়কর। এর আগে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নগরে শোভাযাত্রা-সমাবেশ-মোটরসাইকেল-গাড়ির বহর নিয়ে শোডাউন করেছেন। তখন রিটার্নিং অফিসার কই ছিলেন? তখন যদি তিনি নোটিশ দিতেন আমরা সাবধান হয়ে যেতাম। তিনি নৌকাকে কিছু বললেন না আর দোষ হলো হাতপাখার? আমি মনে করি এই নোটিশ দেওয়ার মাধ্যমে রিটার্নিং কর্মকর্তা নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।
প্রার্থী সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল বলেন, আমার নামে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হলেও তা এখনও নিশ্চিত করিনি। যার জন্মই হয়নি সে কী করে শোকজ পায়, সেটা আমার বোধগম্য নয়। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এক মাস ধরে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাকে তো শোকজ করেনি নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন কমিশন যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তিনি নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ইভিএম নিয়ে আমার আপত্তি জানিয়ে ২৯ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করেছি। ওইদিনই ডাকযোগে আমার দাবিসমূহ নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি অসুস্থ থাকায় সাক্ষাত হয়নি।
তাপস বলেন, বরিশালের রিটার্নিং কর্মকর্তা ইতোমধ্যে নিরপেক্ষতা হারিয়েছেন। আমি তার প্রত্যাহার চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছি। রিটার্নিং অফিসার হুমায়ূন কবিরকে প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়ে ওই দরখাস্তে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করার আবেদন জানিয়েছি। আমি নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন চাইছি।
যদিও অভিযোগের বিষয় সঠিক নয় বলে উল্লেখ করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির। তিনি দাবি করেন, হাতপাখার প্রার্থীর শোডাউন আর নৌকার প্রার্থীর মধ্যে তুলনা করার বিষয় নয়। নৌকার প্রার্থী আমাদের কথা মেনে অনেক কর্মসূচি বাতিল করেছেন। তাকে আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে আমরা যা বলছি সেটাই শুনছেন। হাতপাখার প্রার্থীকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা শোনেননি।
এই কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচন কমিশনের চোখে সব প্রার্থীই সমান। কেউ কাছের বা দূরের নন। সবার জন্য সমান আইন ও সুবিধা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, ২০ এপ্রিল বিশাল শোডাউন ও কেন্দ্রিয় নেতাদের নিয়ে বরিশালে প্রবেশ করেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত। এরপর নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছেন তিনি।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরকে