সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। ছবি- সংগৃহীত

বরিশাল নগরীর ভবনমালিকদের জিম্মি করে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান সড়ক পরিদর্শক সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের বিরুদ্ধে। সাজ্জাদ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি পদে থাকার কারণে বিশাল বাহিনী তৈরি করে চাঁদাবাজি করতেন বলে অভিযোগ করেছেন করপোরেশনের খোদ কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা।

যদিও করপোরেশন থেকে জানানো হয়েছে, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত ইতোমধ্যে সড়ক পরিদর্শক পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।

জানা যায়, ২০১৮ সালে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তার আস্থাভাজন সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতকে মাস্টাররোলে ১০ হাজার টাকা বেতনে সিটি করপোরেশনে চাকরি দেন। পরে করপোরেশনের প্রধান সড়ক পরিদর্শক পদে সংযুক্ত করা হয়। সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ওই পদে বহাল ছিলেন সাজ্জাদ।

নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধান সড়ক পরিদর্শক পদে থেকে সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত ছাত্রলীগের নামধারী ৫০/৬০ জন ছেলে নিয়ে বিশাল বাহিনী তৈরি করে। তাদের কাজ ছিল ভবনমালিকদের টার্গেট করে টাকা আদায় করা। কোনো ধরনের নোটিশ না দিয়েই ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করত। সেই টাকা আদায় করতে বিভিন্নজনের ভবন ভাঙার মৌখিক নোটিশ দিত। আমার ওয়ার্ডে এরকম বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। এমনকি আমরা কাউন্সিলর হলেও আমাদের কিছু জানাত না সে। নিজের খেয়াল খুশিমতো চাঁদাবাজি করত। চাঁদা না পেলে হয়রানির শেষ ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর বৈদ্যপাড়া এলাকার এক শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছরের এপ্রিল মাসে আমার ভবন নির্মাণে ত্রুটির অভিযোগ এনে রাজিব নামে এক লোককে পাঠায় সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। বিনা নোটিশে ভবন ভাঙার হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। বাধ্য হয়ে সেই চাঁদা দেওয়ার পরও আমার ভবনের একটি অংশ বেআইনিভাবে ভেঙে ফেলা হয়। এরপর আরও এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সাজ্জাদ।

সিটি করপোরেশনের দুইজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে বলেন, করপোরেশনে কোনো আইন চলত না। মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশ ও তার অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাদের কথাই ছিল শেষ কথা। আমরা সব সময় আতঙ্কগ্রস্ত থাকতাম, কখন চাকরিচ্যুতির নোটিশ পাই।

তাদের দাবি, সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রণ করতেন সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত।

রূপাতলী বাস টার্মিনালের শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম মানিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাদিক আব্দুল্লাহর নির্দেশে সাজ্জাদ, মুনীম, রাজিব ও মান্না আমাদের অফিসে এসে অমানুষিক মারধর চালায়। ওই বাহিনীর হামলায় দুই দিনে সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার সুলতান মাহমুদসহ ১৮ জন আহত হয়েছিল। একজনকে ঘরে ঢুকে কুপিয়ে জখম করেছিল। আমরা কোনো হাসপাতালে চিকিৎসাও নিতে পারিনি। সাজ্জাদ বাহিনীর কথা যারাই শুনত না তাদেরকে মারধর, হয়রানি করা হত। আর বিভিন্নজনের কাছ থেকে যে চাঁদা তুলতেন তা সকলেই জানেন।

২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব ঢাকা পোস্টকে বলেন, বরিশাল সিটি করপোরেশনকে একটা চাঁদাবাজদের আশ্রয়স্থলে পরিণত করা হয়েছিল। কথায় কথায় বাড়ি ভাঙতে যাওয়া রুটিনে পরিণত হয়েছিল। বরিশাল শহরে এই মাস্টাররোলের ১০ হাজার টাকা বেতনের কর্মচারী সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছে। যার সাক্ষী বরিশালের অগণিত মানুষ। মেয়র বলতেন, নগরীতে পুকুর ভরাট করা যাবে না। অথচ সাজ্জাদকে চাঁদা দিয়ে যে কত পুকুর ভরাট হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই। সবশেষ শের-ই-বাংলা সড়কের মধ্যেও একটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে।

তিনি আরও বলেন, ভবনমালিকদের জিম্মি করে বিশাল অঙ্কের টাকার মালিক হয়েছে সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। সিটি করপোরেশন থেকে এই সংশ্লিষ্ট চাঁদাবাজির কলকাঠি নাড়ত সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত। তার সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাচ্ছি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন এবং ২০ মিনিট পরে কল করবেন বলে জানান। কিন্তু এরপর তাকে আর পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ ফারুখ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত সড়ক পরিদর্শকের পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন অনেক আগেই। তাছাড়া তার বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ কেউ আমাকে দেয়নি। এমন অভিযোগ পেলে খতিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/এমজেইউ