আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের মামলায় ছাত্রলীগ কর্মী আসামি
ছাত্রলীগ কর্মী লিটন
পটুয়াখালীতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ ও পুলিশের পক্ষ থেকে তিনটি মামলা করা হয়েছে। মামলাগুলোর একটিতে লিটন নামে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের এক সক্রিয় কর্মীকেও আসামি করা হয়েছে। এ নিয়ে দলের মধ্যে সমালোচনা চলছে।
গত শনিবার (২০ মে) বিএনপির জনসমাবেশকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষের ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হন। এ ঘটনার একদিন পর সদর থানায় মোট তিনটি মামলা করা হয়। তিনটি মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
এর মধ্যে পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী রায়হান হোসেন বাদী হয়ে সদর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মনির মুন্সীকে প্রধান আসামি করে ২৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও ২০০ জন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছেন।
তিনি মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন- শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ চত্বর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে যোগদানের জন্য সবুজবাগ এলাকায় যাওয়ার পথে কলেজ রোড এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও পটুয়াখালী সদর থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করে। পটুয়াখালী সদর থানার এসআই (নিরস্ত্র) বিপুল হাওলাদার গত ২১ মে পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সেহাংশ সরকার কুট্টিকে প্রধান আসামি করে মামলাটি করেন। এতে মোট ১৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে- আওয়ামী লীগের পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পটুয়াখালী কেন্দ্রীয় ঈদগাহের সামনে শুরু হলে ১ নং আসামি নির্দেশে অজ্ঞাতনামা আসামিরা বেআইনিভাবে জনতা বন্ধে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্য আক্রমণ করেন।
অন্যদিকে পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাসির উদ্দিন হাওলাদার বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেন। এতে মোট ১৬ জনকে আসামি করা হলেও ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী সবুজবাগ ৯নং লেনের বাসিন্দা মো. লিটনকে ১৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
নাসির উদ্দিন হাওলাদারের দায়ের করা মামলায় দাবি করা হয়- গত ২০ মে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে শহরের মুসলিমপাড়া এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা চালান। ওই মামলায় পটুয়াখালী জেলা যুবদলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন, সাধারণ সম্পাদক শিপুল খানসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ২০০ থেকে ২৫০ জনকে অজ্ঞাত নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী নাসির উদ্দিন হাওলাদার বলেন, এই মামলা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আমি মামলার কাগজেও স্বাক্ষর করিনি। কে আসামি তাও বলতে পারি না। এটা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে জিজ্ঞাসা করেন।
এ বিষয়ে লিটন বলেন, ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে আমি ছোটবেলা থেকেই জড়িত। আমার সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে এই বিএনপির মামলায় ঢুকিয়ে দিয়ে আমার ইমেজ নষ্ট করেছে। আমি সিনিয়র নেতাদের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ করেছি। তারা বলেছেন বিষয়টি দেখবেন।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. সব্যসাচী খান বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কিছু অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখনো জড়িত আছে। তারা ছাত্রলীগের কর্মঠ সক্রিয় কর্মীদের নিষ্ক্রিয় করার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। লিটন ছাত্রলীগের সক্রিয় একজন কর্মী তাকে এভাবে বিএনপির মামলায় যুক্ত করার পেছনে একদল অনুপ্রবেশকারী কাজ করছে। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই।
পটুয়াখালী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, লিটন আমাদের ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় কর্মী, কে বা কারা ষড়যন্ত্র করে ওর নাম এই মামলায় ঢুকিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমি সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি, যেন এই বিষয়টি তারা গুরুত্ব সহকারে দেখেন।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর হোসেন বলেন, বিষয়টি ভুলবশত হয়েছে, ঠিক করা হচ্ছে।
পটুয়াখালী সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মামলার বাদী এবং আসামি ছাত্রলীগের। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
মাহমুদ হাসান রায়হান/আরএআর