জয়নাল আবেদীন

স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হলেও ঝালকাঠি সদর উপজেলার কোর্ট রোডের মো. জয়নাল আবেদীন সিকদার মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি এখনও। যুদ্ধকালীন কমান্ডারের হাতে লেখা প্রত্যয়ন পত্র, অস্ত্র জমা দেওয়ার রশিদ, তিনজন সহযোদ্ধার লিখিত প্রত্যয়নপত্র থাকলেও আজও পাননি মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি । ২০১৭ সালে ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সহ যাচাই-বাছাই কমিটির ৬ সদস্যের স্বাক্ষরিত 'ক' তালিকায় নাম থাকলেও চূড়ান্ত গেজেটে নাম না থাকা রহস্যজনক। অথচ যাচাই-বাছাই কমিটি  ক তালিকাভুক্তদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে প্রতীয়মান হয় মর্মে স্বাক্ষর করেছিলো।

তার ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেয়েছেন অনেক আগেই। ঝালকাঠি সদর উপজেলার কেওড়া ইউনিয়নের সারেঙ্গল গ্রামের মৃত আবুল হাসেম সিকদারের ছেলে জয়নাল আবেদীন। একাত্তরের ২২ শে মে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে পিরোজপুর জেলার কাউখালী থানার কেউন্দিয়া হাইস্কুল মাঠে এবং আতা ক্যাম্পে হ্যান্ড গ্রেনেড ও রাইফেলের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন বলে জানান তিনি।

৯ নাম্বার সেক্টরের কমান্ডার মেজর এমএ জলিল এবং সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শাহজাহান (ওমর) বীরউত্তম এর কোম্পানি কমান্ডার আব্দুল হাই পনা'র নেতৃত্বে কেউন্দিয়া, জুলুহার, কাউখালীসহ সংশ্লিষ্ট নদী তীরবর্তী এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন জয়নাল।

৭৬ বছর বয়সে এসে জয়নাল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর বয়স ছিলো ২৬ বছর। যুদ্ধের আগে গ্রামের বাড়িতে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার কাজে ও শিক্ষকতার দায়িত্বে ছিলেন। ২২শে মে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

কাউখালী-জুলুহার নদীতে গানবোটের সাথে পাকহানাদারদের পণ্য পরিবহন গাড়িতে আক্রমণ, পাট বোঝাই একাধিক জাহাজে আগুন দিয়ে নদীতে হানাদারদের গানবোট চলাচলে বাধা দেন। শিরযুগ,পাকমহর,বারানী খালে মুক্তিযোদ্ধাদের নৌপথে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা প্রমাণিত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র উপস্থাপনের পাশাপাশি তিনজন যুদ্ধকালীন সঙ্গীর লিখিত প্রত্যয়ন ও উপস্থিত সাক্ষ্য প্রয়োজন হয়। সে অনুযায়ী জয়নাল যাদের লিখিত প্রত্যয়ন ও সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন তাঁরা হলেন, এস.কে শহিদ (সেনা) লাল মুক্তিবার্তা নাম্বার - ০৬০২০১০০৬১, আলী হোসেন (ঝালকাঠি) - ০৬০২০১০৬৯৮ এবং আ. জিয়াদ (পিরোজপুর) - ০৬০৫০৪০০৯৮। এদের মধ্যে এস.কে শহিদ তৎকালীন ক্যাম্পের ক্লার্ক ছিলেন।

জয়নাল আবেদীন দুঃখ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েও স্বাধীনতার ৫০ বছর পর রাষ্ট্রীয় গেজেটে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম না থাকা দুঃখজনক। এই জন্য আমাকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ভাবছে অনেকে। আমি মুক্তিযোদ্ধা হয়ে মরতে চাই। 

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন খাঁন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাগজপত্র ঠিক থাকলে গেজেটভুক্ত হওয়ার কথা। হয়তো জয়নাল আবেদীন বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব দেয়নি। একবার চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়ার পর পূণরায় আবেদন করেননি। তাঁর সাক্ষীরা যাচাই-বাছাই কমিটির কাছে কী সাক্ষ্য দিয়েছে তা দেখতে হবে।

ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাবেকুন নাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি প্রদানের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ হলো জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। সম্প্রতি আমরা যাচাই-বাছাই নিয়ে যে কাজ করেছি সেটি জামুকা থেকে দেওয়া তালিকা ধরে করেছি। আমরা নতুন কাউকে বাছাই করতে পারিনি।

জয়নাল আবেদীন আবার আবেদন করলে কী ব্যবস্থা নিতে পারবেন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, আমরা জামুকার সঙ্গে কথা বলতে পারবো, আবেদনটিতে প্রয়োজন হলে ইতিবাচক মন্তব্য যুক্ত করে ফরোয়ার্ডিং করতে পারবো। বিভিন্ন ব্যক্তিদের বক্তব্য যুক্ত করে  মিডিয়ায় প্রকাশিত কোনো ইতিবাচক সংবাদ কাটিং থাকলে সেগুলোও যুক্ত করা যেতে পারে।

ঝালকাঠি/এমআইএইচ