৩০ মণ ওজনের ‘সাদা সম্রাট’কে দেখতে ভিড় করেছেন অনেকেই
নাম তার সাদা সম্রাট। মুখ, বাম পাজর ও পিছনে কালো ছোট ছোট ছোপ আকৃতির দাগ যেন তার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাদা সম্রাটকে দেখতে আশপাশের গ্রামের লোক প্রতিদিন ভিড় জমায় ফরিদপুর সদরের চাঁদপুর ইউনিয়নের ধোপাডাঙ্গা গ্রামে মো. মাজহারুল ইসলামের (৩৯) বাড়িতে।
গরুটি তিনি বাড়ি থেকে বিক্রি করতে চান ছয় লাখ টাকায়।
বিজ্ঞাপন
সাদা সম্রাট একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়। এটিকে এবারের কোরবানি ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। গরুটির সৌন্দর্য্য আকৃষ্ট করছে সবাইকে। সাদা সম্রাটের ওজন এক হাজার ২০০ কেজি অর্থাৎ ৩০ মণ। বয়স চার বছর।
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে গত তিন বছর ধরে লালন-পালন করে সাদা সম্রাটকে এত বড় করেছেন মাজহারুল ইসলাম। গরুটির দাম চাইছেন ৬ লাখ টাকা। বাড়িতেই এর দামদর করে যাচ্ছেন ব্যবসায়ী-ক্রেতারা। এ পর্যন্ত দাম উঠেছে সাড়ে চার লাখ টাকা। প্রতিদিন বাড়িতে যে পরিমাণ ক্রেতাদের ভিড় এজন্য মাজহারুলের এ গরুটি বাজারে উঠানোর আপাতত কোনো চিন্তা নেই। তার ধারণা বাড়ি থেকেই বিক্রি হয়ে যাবে সাদা সম্রাট।
বিজ্ঞাপন
মাজহারুল ইসলাম ধোপাডাঙ্গা গ্রামের শাহিদ মোল্লার ছেলে। তিনি একজন খামারি। গরুর খামারের পাশাপাশি তিনি স্থানীয় কোষা গোপালপুর দাখিল মাদরাসায় তিনি শিক্ষকতা করেন। ২০১৫ সালে শিক্ষকতা পেশায় তার যোগদান।
মাদরাসা শিক্ষক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু করলেও ২০১৮ সাল থেকে গরুর খামার দেন নিজ বাড়িতে। এই খামারে গত তিন বছর ধরে তিনি তিল তিল করে সাদা সম্রাটকে লালন-পালন করে যাচ্ছেন। গরুগুলো রাখা হয়েছে বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া মেঝে পাকা করা দোচালা বিশিষ্ট বড় একটি টিনের ঘর। গরু রাখার ঘরে দুটি ফ্যান বসিয়েছেন যাতে গরমে কষ্ট না পায়। গরুর ছোটখাটো অসুস্থতায় তিনি নিজেই চিকিৎসা দেন।
মাজহারুল জানায়, ওই এলাকার একটি খামার থেকে তিন বছর আগে এক বছর বয়সী একটি ফ্রিজিয়ান জাতের এড়ে বাছুর কেনেন ৬০ হাজার টাকা দিয়ে। তখন ওই ষাড়টির ওজন বড় জোর ছিল দুই মণ। তিন বছর পর সেই বাছুর আজ মস্ত বড় ষাড়। নাম তার সাদা সম্রাট আর ওজন ৩০ মণ। তবে গায়ে গতরে বড় হলেও অনেক শান্ত সাদা সম্রাট। খাওয়া-দাওয়া শেষ হলে একটু বিশ্রাম না হলে চলে না। সাধারণত দাঁড়িয়ে থাকলেও খাবারের পর বসে মেঝেতে শরীর এলিয়ে দিয়ে দুই চোখ বুজে বিশ্রাম নিয়ে নেয় গরুটি।
মাজহারুল বলেন, তাদের পরিবার কৃষি সংশ্লিষ্ট পরিবার হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ গরু লালন পালন করে আসছে। এজন্য গরু পালনের অভিজ্ঞতা তার ছোটবেলা থেকেই। তবে ব্যবসায়ীক ভাবে গরুর খামার করে পালন শুরু করেন ২০১৮ সাল থেকে। স্থানীয় একজন ভেটেরনারী চিকিৎসক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করে ও উৎসাহ জোগান।ওই চিকিৎসকই আমাকে গরুর খামার করার জন্য সব রকম পরামর্শ উৎসাহ প্রদান করেন।
গরু লালন পালনের ব্যাপারে তিনি প্রশিক্ষণও নেন। কিভাবে গরুর ছোটখাটো চিকিৎসা করাতে হয়। কোন রোগের কি লক্ষণ, তার জন্য কি করতে হয়, কিভাবে ঔষধ খাওয়াতে হয়, এসব আয়ত্ব করে ফেলেন তিনি। গরু অসুস্থ হলে মাজহারুলই নিজে চিকিৎসা করেন। ইনজেকশন দেন, ওষুধ খাওয়ান। এর জন্য কোন পশু চিকিৎসক তিনি ডাকেন না।
মাজহারুল জানায়, গরুটির পিছনে সার্বক্ষণিক একজন সহযোগী রাখা হয়েছে। খাবার হিসেবে দেওয়া হয় দেশী গমের ভূষি, খেতের ভূট্টা গুড়া করে, ধানের খড় ও কাঁচা ঘাস। প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার টাকা খরচ হয় তার গরুটি লালন পালনে।
বর্তমানে মাজহারুলের খামারে সাদা সম্রাটসহ মোট পাঁচটি গরু ছিল। এর মধ্যে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি গরু তিনি বিক্রি করেছেন এক লাখ ২০ হাজার টাকায়। অপরটি শাহীওয়ালী জাতের। সেটি বিক্রি করেছেন এক লাখ পাঁচ হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, বর্তমান বাজারের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এ অবস্থায় গুরু লালন পালন করায় খরচ অনেক বেশি। দ্রব্যমূল্যের কারণে ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। আমরা খামারিরা এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত। গমের থেকে গমের ভূসির দাম বেশি। তিনি সরকারের নিকট দাবি করেছেন, যেন ভারত থেকে কোরবানি উপলক্ষ্যে কোনো প্রকার গরু আমদানি করা না হয়। এই সময় ভারতীয় গরু আসলে খামারিরা ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা এ কে এস আসজাদ বলেন, ফরিদপুরে ফ্রিজিয়ান, নেপালী, শাহী ওয়ালী ও দেশি জাতের গরু এ অঞ্চলে পালন করা হয় বেশি। জেলায় প্রায় ৭ হাজার খামারে প্রায় দেড় লাখ গরু প্রস্তুত রয়েছে কোরবানির ঈদের জন্য। যা জেলার চাহিদার তুলনায় বেশি।
তিনি আরও বলেন, মাজহারুলের খামারটি আমাদের তদারকির মধ্যে রয়েছে। নিয়মিত তাকে এ ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়। তিনি একজন সফল খামারি।
জহির হোসেন/আরকে