ব্যথায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন দিলরুবা। পাশে শুয়ে আছে শিশুসন্তান/ ছবি ঢাকা পোস্ট

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় ছুরি দিয়ে দিলরুবা আক্তার টুম্পা (২৫) নামে এক গৃহবধূর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে স্বামী ও তার পরিবার। ওই গৃহবধূ হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। রোববার (২৮ মার্চ) থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন গৃহবধূ টুম্পার পরিবার।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাতীবান্ধা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এরশাদুল আলম। এর আগে শনিবার (২৭ মার্চ) রাতে উপজেলার টংভাঙ্গা ইউপির পশ্চিমবেজ গ্রাম এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।

অভিযুক্তরা হলেন হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিমবেজ গ্রামের মোখলেছার রহমানের ছেলে ও গৃহবধূ দিলরুবার স্বামী অছিউর রহমান প্রাণ (২৭), ভাই মুরাদ হোসেন মন ও মা মালতি লতা।

আহত দিলরুবা আক্তার টুম্পা উপজেলার সিংগীমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ গড্ডিমারী গ্রামের মৃত মোফাজ উদ্দিনের মেয়ে।

জানা গেছে, ৫ বছর আগে ভালোবেসে তারা বিয়ে করেন। প্রথম দিকে প্রাণের মা মেনে না নিলেও সন্তান হওয়ার পর উভয় পরিবার একত্র হয়ে তাদের মেনে নেয়। ভালোই চলছিলো প্রাণ ও দিলরুবার সংসার। কিন্ত বাধা হয়ে দাঁড়ায় শাশুড়ি মালতি লতা। বিয়েতে কিছু না পাওয়ায় দিলরুবাকে বাবার বাড়িতে থেকে টাকা আনতে চাপ প্রয়োগ করেন তিনি।

দিলরুবা বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দিতে না পারায় নেমে আসে নির্যাতন। এ নিয়ে কয়েকবার স্থানীয়ভাবে সালিস বৈঠকও হয়। কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায় না। চলতে থাকে স্বামী-শাশুড়ির নির্যাতন।

এমতাবস্থায় গত শনিবার সন্ধ্যায় ২ লাখ টাকার জন্য টুম্পাকে মারধর করেন স্বামী। এতে যোগ দেন দেবর ও শাশুড়ি। একপর্যায়ে ভাই ও মায়ের সহযোগিতায় স্বামী প্রাণ ধারাল ছুড়ি দিয়ে টুম্পার পায়ের রগ কেটে দেন। পরে পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে পুলিশের সহযোগিতায় টুম্পাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান।

রোববার (২৮ মার্চ) দুপুরে সরজমিনে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, ব্যথায় হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন দিলরুবা। পাশে শুয়ে ছটফট করছে শিশুসন্তান ইবনে মেহমেদ। দিলরুবার ব্যান্ডেজ করা পায়ের চারদিকে রক্ত শুকিয়ে জমাটবদ্ধ হয়ে আছে। 

দিলরুবার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, টাকার জন্য স্বামী, দেবর ও শাশুড়ি প্রায় আমাকে মারধর করেন। শনিবার রাতে তারা আমার পায়ের রগ কেটে দেয়।

এ বিষয়ে জানতে দিলরুবার স্বামী অছিউর রহমান প্রাণের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও বন্ধ পাওয়া যায়।

হাতীবান্ধা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। এ সময় গৃহবধূকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এমএসআর