বাদাম চাষে খরচ কম, লাভ বেশি
বাদাম তোলায় ব্যস্ত চাষিরা
বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর তীরে বাড়ছে বাদাম চাষ। মাটি উর্বর হওয়ায় কম খরচে বেশি লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। তবে ফলন ভালো হলেও বাজারজাতকরণের সুব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্ক্ষিত দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন তারা।
বান্দরবানের সাংগু নদীর তীরজুড়ে এখন বাদাম তোলার ব্যস্ততা। এ বছর নদী তীরবর্তী বালাঘাট, ভরাখালী এবং ক্যামলংসহ বিভিন্ন এলাকার বিস্তীর্ণ জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। মাটি উর্বর হওয়ায় অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশক দিতে হয়নি। ফলে বীজ রোপণের তিন মাসের মধ্যেই বাদাম তোলা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মান ভালো হওয়ায় প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন জেলায় এখানকার বাদাম বাজারজাত করা হয়। তবে জেলায় কোনো বাজারশেড না থাকায় ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা। চাষিরা যেন বাদামের প্রত্যাশিত দাম পায় সেজন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা ভাবছে কৃষি বিভাগ।
বাদাম চাষি নূরুল হক বলেন, ‘গত বছর কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের বাদামের বীজ দেওয়া হয়েছিল। সে বীজ দিয়ে আমি ৫ কানি জমিতে বাদাম চাষ করেছি। আমার মোট খরচ হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর বাদাম বিক্রি করেছি ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। আমার প্রায় ২ লাখ টাকা লাভ হয়েছে।’
বিজ্ঞাপন
চাষি মর্জিনা বলেন, ‘গত বছর ৪ কানি জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। এ বছর ৫ কানি জমিতে চাষ করেছি। গত বছরের তুলনায় এ বছর বাদাম ভালো হয়েছে। লাভও বেশি হবে বলে আশা করছি।’
চাষিদের অভিযোগ, বাজারে শেড না থাকায় ৫ হাজার টাকার বাদাম বিক্রি করতে হচ্ছে ৩ হাজার টাকায়। এতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একটি বাজারশেডের ব্যবস্থা করলে লাভবান হতে পারতেন বলে দাবি করেছেন তারা।
চাষিরা জানান, প্রতি বছর অক্টোবর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাদামের বীজ লাগানো হয়। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময় খেত থেকে এই বাদাম তোলা শুরু হয়। বাদামের বীজ লাগানোর আগে হাল চাষ দিয়ে মাটি সামান্য নরম করে নিতে হয়। আর পরিষ্কার করতে হয় আগাছা। তারপর সারি করে লাগানো হয় বাদাম বীজ। সাঙ্গু নদীর চরের মাটি উর্বর হওয়ায় দিতে হয় না অতিরিক্ত সার কিংবা কীটনাশক। তিন মাসের মধ্যেই বাদাম ঘরে তোলেন চাষিরা । তাই অল্প কষ্টে অধিক লাভে খুশি বাদাম চাষিরা।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর ১ হাজার ১৩৫ হেক্টর জমিতে বাদাম আবাদ করা হয়েছে। গত বছর ১ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে ২ হাজার ৪ মেট্রিক টন বাদাম উৎপাদিত হয়। জেলায় এখন ত্রিদানা, মাইজচর, ঝিঙ্গা, বিনা, চীনা বাদাম-৬ ও স্থানীয় জাতের বিভিন্ন বাদামের চাষ হচ্ছে। আর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তায় জেলায় বাদাম চাষ সম্প্রসারণের জন্য কৃষকদের বীজ, সার, কীটনাশকসহ নানা ধরনের উপকরণ দেওয়া হচ্ছে।
বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. ওমর ফারুক বলেন, বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর চরে আগেও বাদাম চাষ হয়েছে, এখনও হচ্ছে। গত বছর থেকে সরকার প্রণোদনার মাধ্যমে বিনা ৬, চীনা বাদামসহ বিভিন্ন প্রজাতির বীজ সরবরাহ করছে। তবে বাদাম বাজারজাতকরণে কিছু সমস্যা রয়েছে। এর ফলে কৃষকরা তেমন লাভবান হতে পারছেন না। বাদাম জমি থেকে তোলার সঙ্গে সঙ্গে বাজারজাত না করে শুকিয়ে গুদামজাত করে পরে বাজারজাত করা হলে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন।
এসপি/জেএস