ফাইল ছবি

ফেনীতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণে পিছিয়ে রয়েছে ছাগলনাইয়া উপজেলা। এ জেলায় মোট পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণকারীর হার ৭৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ। সর্বনিম্ন ছাগলনাইয়া উপজেলায় এ সংখ্যা ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশ। জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

একই কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, ৭৬ দশমিক ১১ শতাংশ হার নিয়ে জেলায় জন্মনিয়ন্ত্রণে শীর্ষে রয়েছে ফেনী সদর উপজেলা।

অন্যান্য উপজেলার মধ্যে পরশুরামে ৭৬ দশমিক ১ শতাংশ, সোনাগাজীতে ৭৫ দশমিক ২৩ শতাংশ, ফুলগাজীতে ৭৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং দাগনভূঞাতে ৭০ দশমিক ৩৫ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জেন্ডার সমতাই শক্তি : নারী ও কন্যাশিশুর মুক্ত উচ্চারণে হোক পৃথিবীর অবারিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন’।

এ দিবস উপলক্ষ্যে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ফেনীর উপ পরিচালক আবু সালেহ ফোরকান উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে জানান, পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণের ক্ষেত্রে ফেনী অগ্রগামী। জনসংখ্যা অনুপাতে ফেনীতে এ পদ্ধতি গ্রহণের হার ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির হার এখানে ৬০ শতাংশ। 

তবে ছাগলনাইয়া উপজেলা পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ছাগলনাইয়া প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা। বেশিরভাগ পুরুষ দেশের বাইরে থাকে। যার ফলে জন্মনিয়ন্ত্রণ হার সে এলাকায় কম। এছাড়া এখানে ধর্মীয় অনুসাশনসহ অল্প বয়সী নারীদের বিয়ে হওয়ার প্রবণতা রয়েছে। যার ফলে মা ও শিশুর মৃত্যুহার বাড়ছে। এসব কারণে অন্য উপজেলার তুলনায় ছাগলনাইয়া কিছুটা পিছিয়ে।

উপ পরিচালক আরও বলেন, ছাগলনাইয়া ঘোপাল ইউনিয়ন ছাড়া অন্য ইউনিয়নে পরিবার পরিকল্পনার কার্যক্রম সীমিত। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে জনবল সংকট। তবে এসব নিয়ে কাজ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

ফেনী জেলা পরিসংখ্যান অফিসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী ফেনীতে বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ৩১০ জন। জন্মহার অনুযায়ী ফেনীতে প্রতিবছর ৩৪ হাজার ৭৯৯ জন শিশু জন্মগ্রহণ করে। ফেনীর মৃত্যুহার অনুযায়ী প্রতিবছর ৭ হাজার ৬০২ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করেন।

একই সূত্র হতে আরও জানা যায়, বিগত জুন মাসে জেলায় সর্বমোট ২ লাখ ১৫ হাজার ৪৯৯ জন নারী-পুরুষ পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এরমধ্যে পরশুরামে ১৬ হাজার ১৮১ জন, ছাগলনাইয়াতে ২৪ হাজার ৯৩৩ জন, ফেনী সদরে ৭২ হাজার ৯৪২ জন, সোনাগাজীতে ৪২ হাজার ১২৫ জন, দাগনভূঞাতে ৩৯ হাজার ৮৭০ জন, ফুলগাজীতে ১৯ হাজার ৪৪৮ জন। অন্যদিকে জেলায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন ১৬ হাজার ৯৫ জন। এরমধ্যে পরশুরামে ১ হাজার ৫৭০ জন, ছাগলনাইয়াতে ২ হাজার ১২৪ জন, ফেনী সদরে ৫ হাজার ১৮৭ জন, সোনাগাজীতে ২ হাজার ৬০৯ জন, দাগনভূঞাতে ২ হাজার ৯৯৬ জন এবং ফুলগাজীতে ১ হাজার ৬০৯ জন।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য মতে, জুন মাসে জেলায় মোট সক্ষম দম্পতির সংখ্যা ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৫১ জন, সর্বমোট খাওয়ার বড়ি নিয়েছে ৯৪ হাজার ৩৪ জন, কনডম নিয়েছে ২৩ হাজার ৬০৪ জন।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ফেনীর উপ পরিচালক আবু সালেহ ফোরকান উদ্দীন বলেন, ফেনীর সকল ইউনিয়নে নিরাপদ প্রসব সেবা ও কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করা হচ্ছে৷ পাশাপাশি শতভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। চলতি বছর প্রতিমাসে গড়ে ৫০০ এর বেশি নরমাল ডেলিভারি হয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়। সকাল ১০টায় র‍্যালি অনুষ্ঠিত হবে। পরবর্তীতে পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে এ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে ফেনী জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এদিন জেলায় শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তাদের পুরস্কৃত করা হয়।

তারেক চৌধুরী/আরকে