রাজশাহীর পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের চর খিদিরপুর। এই চরে মোট ভোটার সংখ্যা ১ হাজার ৭৩১ জন। কিন্তু বসবাস করেন মাত্র ২০০ ভোটার। তারা পদ্মার চরের ভোটার হলেও মূল ভূখণ্ডে বসবাস করেন না  অধিকাংশই। 

সোমবার (১৭ জুলাই) চর খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটগ্রহণ চলছে। তাই অনেক ভোটার নদী পার হয়ে ভোট দিতে আসছেন চরে। 

২০ বছর আগে চর খিদিরপুর ছেড়েছেন হাফিজুল শেখ ( ৬৯)। তিনি বসবাস করেন পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভা এলাকায়। বসবাসের সুবাদে তিনি সেই এলাকার ভোটার।

হাফিজুল শেখ ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'নদী ভাঙনের কারণে ২০ বছর আগে ছেড়েছি পদ্মার চর। ১১ থেকে ১২ বছর হল এই চরে আসা হয়নি। ভাতিজা ভোটে দাঁড়িয়েছে। ভোর বেলায় ফোন দিয়েছে চাচা আসতে হবে কেন্দ্রে। সকাল চলে আসলাম।

তিনি আরও বলেন, চর খিদিরপুরে ৪টি পাড়া। এই পাড়াগুলোতে ৬২ পরিবার বসবাস করে। এই পরিবারগুলোতে প্রায় ২০০ ভোটার বসবাস করেন। দীর্ঘ ১২ বছর পরে নির্বাচন। এই নির্বাচনে অনেক পরিচিত মানুষ ভোট দিতে আসছেন। যে মানুষগুলো নদী ভাঙনের কারণে পদ্মার চড় ছেড়েছিল। তারাও আজ আসছে ভোট দিতে। 

এক সময়ের পদ্মাচড়ের বাসিন্দা মানুয়ারা বেগম (৫৯)। তিনি বর্তমানে স্বামী সন্তানদের নিয়ে  বসবাস করেন দামকুড়া এলাকায়। 

মানুয়ারা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, 'সে ৯ বছর আগে গেছি আর আসা হয়নি। এ পদ্মার চরে আমাদের জমি আছে। সে জমিতে ছেলেরা চাষাবাদ করে। তাদের যাওয়া আসা আছে পদ্মার চরে। কিন্তু আমার আসা হয় না। আজ আসলাম ভোট দিতে। এখানে অনেকেই আসবে যে মানুষগুলোর সঙ্গে দেখা হয়নি। ভোট শেষে থেকে যাব কয়েকদিন। এখানে আত্মীয়র বাড়ি আছে। তার আগে থেকেই বলেছে। ভোট দিয়ার পরে এখানে থাকতে হবে কয়েকদিন। আমারও ইচ্ছা আছে থাকার। 

মনোয়ারা ননদ আশরাফি বেগম (৪৫)। তিনি আসছেন, ভোট দিতে। তারা একই নৌকায় উঠে চর খিদিরপুর এর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। 

আশরাফি বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা চরে ভালো লাগে। ঘরবাড়ি না থাকার কারণে থাকা হয় না। এখানে অনেক অসুবিধা। যোগাযোগ ভালো না, বিদ্যুৎ নেই, চিকিৎসার অভাব। সবমিলে চরের জীবন কষ্টকর। অনেকদিন পরে আসলাম। বাড়িতে বলে রেখেছি এক সপ্তাহ থাকব পদ্মার চরের আত্মার বাড়িতে।

চর খিদিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের পিজাইডিং কর্মকর্তা আবু বাসির ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভোটগ্রহণ সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ চলছে। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ১ হাজার ৭৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮৯০ জন ৪১ জন এবং নারী ভোটার ৮৪১ জন। বেলা ১২টায় ৩০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে।

শাহিনুল আশিক/আরকে