ভ্যান হারিয়ে দিশেহারা তাছেনের চিন্তা ‘কীভাবে শোধ হবে কিস্তি’
ভ্যান হারিয়ে নির্বাক তাছেন মন্ডল
কিস্তিতে কেনা ব্যাটারি চালিত ভ্যান গাড়ি হারিয়ে নির্বাক ষাটোর্ধ্ব তাছেন মন্ডল। জীবিকার একমাত্র সম্বল হারিয়ে বেঁচে থাকার কোনো পথ দেখছেন না তিনি। এখন ভ্যান কেনার কিস্তির টাকা কীভাবে পরিশোধ করবেন এই চিন্তায় ঘুম আসছে না তার।
শনিবার (১৫ জুলাই) সকালে লালপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন দুই বছরের নাতি হোসাইনকে দেখতে আসেন। এ সময় হারিয়ে যায় তার ভ্যানটি।
বিজ্ঞাপন
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় (সিসি ক্যামেরা) তালা দেওয়া ভ্যানটি চুরির ঘটনা ধরা পরে । এতে দেখা যায়, চেক টি শার্ট পরিহিত একজন ব্যক্তি ভ্যানটির তালা খুলে। এর পরে ভ্যানটি নিয়ে দ্রুত হাসপাতাল চত্বর ত্যাগ করেন।
নাতি হোসাইনকে দেখে কিছুক্ষণ পরে ফিরে দেখেন তার ভ্যান নেই। এ সময় তাছেন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। অশ্রুশিক্ত চোখে তাছেন মন্ডল বলেন, ‘আমার কোন ছেলে নেই। পাঁচ মেয়ে। এই ভ্যান চালিয়ে ৪ মেয়ের বিয়ে দিয়েছি। বৃদ্ধ বয়সে পেটের দায়ে ভ্যান চালায়। ৪ মাস আগে স্থানীয় একটি ব্যাংক থেকে ৭৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে এই ভ্যান গাড়িটি কিনছিলাম। প্রতি মাসে ৫ হাজার ৫০০ টাকা কিস্তি লাগে। সেই ভ্যানটি চুরি হয়ে গেল। এখন আমি এই বয়সে খাব কি? আর কিস্তিই বা দিব কীভাবে? তোমরা বাপ আমার ভ্যান খুঁজে দাও।’
বিজ্ঞাপন
তাছেন মন্ডলের মেয়ে খুশি বেগম বলেন, আমার ছেলে নানাকে খুব ভালোবাসে। গত বৃহস্পতিবার ডায়েরিয়া ও জ্বরের কারণে হাসপাতালে ভর্তি করি ছেলেকে। জ্বরের ভেতরে নানা নানা প্রলাপ করছে। তাই আব্বাকে বুলনু- আব্বু আমার ব্যাটা খালি নানা নানা বুলছে। তুমি আসি একবার দেখা করি যাও না। ছেলেডা আমার কষ্ট পাছে। আমার এই কথা শুনি আব্বা আসলো। দেখা করতে এসে আব্বার ভ্যানডা হারা গেল। এখন আব্বা কি কাজ করি খাবে। বাপের সংসার কী করে চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা পাঁচ বোন। আমাদের কোনো ভাই নেই। অভাবের সংসারের কারণে চার বোনের ১৮ বছর হওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দেন আব্বা। ইতি নামের এক বোনের বিয়ে হতে বাকি আছে। সে ইপিজেডে কাজ করে। সেখানে যে বেতন পাই তা দিয়ে চাল আর কিস্তি দিতে হয়। আর আব্বা ভ্যান চালিয়ে তরকারি কিনেন। বয়স্ক মানুষ। ভ্যান চালিয়ে তরকারি কিনতে ধায় হয়ে যায় আব্বার।’
এ বিষয়ে লালপুর উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কে এম শাহাবুদ্দিন বলেন, সম্পূর্ণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত রয়েছে। চুরির বিষয়ে পুলিশকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি চুরি ঠেকাতে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।
লালপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ভ্যান ও অটো চুরি বন্ধে কাজ করছে পুলিশ। এ চক্রের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। উপজেলা নির্বাহী অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সহযোগিতার চেষ্টা করা হবে।
শাহিনুল আশিক/এএএ