বিএনপির পদযাত্রায় নিহত সজিবের মায়ের করুণ আহাজারি
লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার পর খুন হওয়া সজিব হোসেনের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। কিছুদিনের মধ্যেই তার যাওয়ার কথা ছিল সুদূর সৌদি আরবে।
এদিকে ছেলে সজিবের শোকে কান্না করতে গিয়ে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাজমা বেগম। অসহায় বাবা আবু তাহের ছেলের শোকে নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। তাদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না স্থানীয়রা।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১৯ জুলাই) যোহরের নামাজের পর সদর উপজেলা চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ধন্যপুর গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সজিবের মরদেহ দাফন করা হয়।
সজিবের শোকে তার মা নাজমা বারবার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলে যাচ্ছেন, সজিব তুই কই? সবাইকে দেখছি, তোকে দেখছি না। সবাই আমার বাড়িতে ভিড় জমিয়েছে। তুই কোথায় গেলি? তুই বুঝি আর আমার জন্য ওষুধ কিনে আনবি না? আর কি তোকে বুকে জড়িয়ে ধরতে পারবো না। আমি তোকে বুকে জড়িয়ে রাখতে চাই। তুইতো আমার সবার আদরের। তোকে ছাড়া আমি কীভাবে বাঁচবো?
বিজ্ঞাপন
সজিবের মা নাজমা বেগম ও বোন কাজল আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৪ সালে ১৩ জুন সজিব জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাই এক বোনের মধ্যে সজিব সবার ছোট। তিনি সবার আদরের ছিলেন।
সজিব পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন। মেঝো ভাই মো. সুজনের সঙ্গে তিনি কাজ করতেন। তার বড় ভাই মো. মিজান সৌদি প্রবাসী। কয়েকদিন পর সজিবেরও সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল। এলাকার কারও সঙ্গে তিনি কখনও বিরোধে জড়াননি। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেন। বিএনপির মিটিংয়ে যাওয়ার সময় বাড়িতে বলে গিয়েছিলেন তিনি লক্ষ্মীপুর যাবেন। লক্ষ্মীপুর গেলেও তিনি আর জীবিত বাড়িতে ফিরলেন না। বুধবার দুপুরে সজিবের নিথর দেহ বাড়িতে ফিরেছে। আদরের সজিবকে হারিয়ে তারা এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। ছেলে শোকে বাবা তাহের প্রায় বাকরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। তিনি কারও সঙ্গে ঠিকমতো কোনো কথা বলছেন না।
সজিবের বাবা আবু তাহের বলেন, সজিব লক্ষ্মীপুরে বিএনপির মিটিংয়ে গিয়েছিল। সেখানে তাকে সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই। যে বা যারা আমার ছেলেকে হত্যা করেছে তাদেরকে গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
সজিবের দাদা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. হানিফ মিয়া বলেন, সজিব আমার সঙ্গে মিছিলে এসেছিল। কিন্তু আমার নাতিকে আওয়ামী ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
সদরের চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাফায়েত হোসেন বলেন, সজিব কৃষকদলের সক্রিয় সদস্য। সবসময় আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রোগ্রামে যেত। কিন্তু সন্ত্রাসীরা তাকে অমানবিকভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আর কখনও তার দেখা পাবো না, এটি সহ্য করতে কষ্ট হচ্ছে। দুপুরে সজিবের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের হামলার পর লক্ষ্মীপুরে কৃষক দলের সদস্য সজিব হোসেনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সজিব সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ধন্যপুর গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিনি চন্দ্রগঞ্জ থানা কৃষকদলের সদস্য।
হাসান মাহমুদ শাকিল/এমএএস