বেরোবিতে মিলনের ভর্তি ও পড়ালেখা নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই
ঠাকুরগাঁওয়ের অসহায় শিক্ষার্থী মিলন সরকারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পাশাপাশি তার পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত মিনিস্টার পদমর্যাদার ডেপুটি কনসাল জেনারেল মো. শাহেদুল ইসলাম।
রোববার দুপুরে তিনি ঠাকুরগাঁও শহরের তার বাসায় মিলনকে ডেকে এনে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আর্থিক সহযোগিতা এবং পরবর্তীতেও তার পড়ালেখার খরচ বহনের দায়িত্ব নিয়েছেন। মিলন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০.৭৫ স্কোর পেয়ে অর্থনীতি বিভাগে চান্স পেয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মিলন সরকার সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের পাইক পাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধী তমিজ উদ্দিনের ছেলে। মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। এ অবস্থায় মিলন সরকার নিজের চেষ্টায় পড়ালেখা চালিয়ে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার খবরটি তার কাছে আনন্দের হলেও ভর্তির খরচ বহন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনি। অনেক চেষ্টা করেও টাকা জোগাড় করতে না পেরে হতাশ হয়ে যান মিলন। পূর্বে
অনেকের কাছে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে পড়ালেখা চালালেও এবার কারও কাছে টাকা চাইতে লজ্জায় পড়ে যান তিনি। এমন অবস্থায় তার হ্তাশার খবরটি জানতে পারেন ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম খাদেমুল ইসলামের ছেলে বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতে মিনিস্টার পদমর্যাদায় ডেপুটি কনসাল জেনারেল মো. শাহেদুল ইসলাম।
বিজ্ঞাপন
মিলন ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় স্থানীয় বেগুন বাড়ি ফাজিল মাদরাসার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৪.১৭ এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে ২০২২ সালে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেন ।
মিলন বলেন, আমি এসএসসিতে যখন পরীক্ষা দেই তখন টাকার অভাবে ফরম ফিলাপ করতে পারিনি। তখন স্যারদের কাছ থেকে ও আরও মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফরম ফিলাপ করেছি। আমার মা মানুষের বাসায় কাজ করে আমাকে লেখাপড়া করিয়েছে। আমি কোথাও কোচিং করতে পারিনি টাকা অভাবে। আমার স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ালেখা করবো। সেই স্বপ্ন থেকেই আমি খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ফরম ফিলাপ করতে যাই তখনও আমার কাছে টাকা ছিল না। আমার অনেক স্যার, এলাকাবাসী এবং আমার মা মানুষের বাসায় কাজ করে লেখাপড়া চালিয়েছে।
মিলন আরও বলেন, অভাবের মধ্য দিয়ে অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা করেছি। আমার স্বপ্ন আমি ম্যাজিস্ট্রেট হবো। গরিব মানুষদের সহযোগিতা করবো। আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। খুব চিন্তিত ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে। আজ চিন্তামুক্ত হলাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।
মিলনের মা মমেজা খাতুন বলেন, ছেলেটা আমার অনেক কষ্ট করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। ছেলের ভর্তি আর লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলাম। দারিদ্রতার কারণে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে পারবো কীনা তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। এমপি সাহেবের ছেলেটা আজ পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা।
ঠাকুরগাঁও-১ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী শাহেদুল ইসলাম বলেন, বেশ কিছু নেতাকর্মীর মাধ্যমে জানতে পারি যে বেগুনবাড়ি এলাকার এক শিক্ষার্থী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছে, কিন্তু টাকার অভাবে সে ভর্তি হতে পারছে না। তার মা মানুষের বাসায় কাজ করে। এটা জানার পর সেই ছেলেকে আমার বাসায় নিয়ে আসতে বলি এবং মিলন যতদিন লেখাপড়া করবে তার দায়িত্ব আমি নিয়েছি।
তিনি বলেন, আমার বাবা মরহুম খাদেমুল ইসলাম যখন সংসদ সদস্য ছিলেন তখন তিনিও মানুষের উপকারে এভাবে হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও বিভিন্ন ভাবে অসহায় মানুষকে সহযোগিতার করার চেষ্টা করছি।
আরিফ হাসান/এমএএস