ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ
সেই রোজিনার পাশে জেলা প্রশাসক
রোজিনা আক্তারের পাশে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ। ছবি- ঢাকা পোস্ট
তিন মাসের গর্ভাবস্থায় স্বামী মারা যাওয়ায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হতো তাকে। খাদ্যের অভাবে পেটের সন্তান মারা যেতে পারে তাই প্রতিবেশী এক নিঃসন্তান নারীর কাছ থেকে খাবার নেন জন্মের পর সন্তানকে দিয়ে দেওয়ার শর্তে। জন্মের পর কথামতো নিজের কন্যা শিশুটিকে সেই প্রতিবেশীকে দিয়ে দেন রোজিনা আক্তার।
রোজিনার এমন করুণ জীবন নিয়ে ‘দুমুঠো খাবারের জন্য সন্তানকে দিয়ে দেন রোজিনা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্ট। সংবাদ প্রকাশের পর শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ সেই রোজিনার পাশে দাঁড়িয়েছেন। নতুন ঘর, দোকান, নগদ অর্থ, বিধবা ভাতাসহ রোজিনার সন্তান আতিককে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টার দিকে জেলা প্রশাসক সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের মুন্সীরহাট বেদেপল্লিতে গিয়ে রোজিনাকে আগামী এক মাসের মধ্যে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র, জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ বৈদ্য প্রমুখ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রোজিনা আক্তারকে একটি নতুন ঘর, মালামালসহ দোকান, নগদ ১০ হাজার টাকা, বিধবা ভাতা ও তার ছেলে আতিকের পড়াশোনা খরচের ব্যয়ভার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আগে গতকাল রোজিনাকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র রোজিনাকে চাল-ডালসহ ২০ দিনের প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করেন।
বিজ্ঞাপন
রোজিনার ছেলে আতিক ঢাকা পোস্টকে বলে, অভাবের কারণে স্কুলে যেতে পারিনি। ভিক্ষা করেছি। এখন নতুন জামা পরে স্কুলে যেতে পারব। পড়তে পারব।
রোজিনা আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘সাংবাদিক ভাই এসে নিউজ করার পর গতকাল ইউএনও স্যার এসেছিলেন। খাবার দিয়ে গেছেন, সেই খাবার রান্না করে খেয়েছি। আজ ডিসি স্যার এসেছেন। আমাকে নতুন ঘর, দোকান, বিধবা ভাতা, ছেলের পড়াশোনা, ছেলেকে নতুন জামা দিয়েছেন। জীবনে কল্পনাও করিনি যে আমার নতুন ঘর হবে, দোকান হবে, তিন বেলা খেতে পারব। সাংবাদিকদের উছিলায় এসব পেয়েছি। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তারা যেন আরও বড় হয়। ডিসি স্যার অনেক ভালো মানুষ। আমাকে দেখতে এসেছেন।’
জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহাম্মেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোজিনা আক্তারকে নিয়ে একটি সংবাদ দেখে গতকাল ইউএনওকে পাঠিয়েছিলাম। আজ নিজে এসে রোজিনা আক্তারের খবর নিয়েছি। তাকে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে একটি নতুন ঘর, দোকান, নগদ অর্থ, ভাতা ও তার ছেলে আতিকের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকার ও জেলা প্রশাসন সব সময় রোজিনাদের পাশে থাকবে।
প্রসঙ্গত, স্বামী শিপন মণ্ডলের আয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে ভালোই কাটছিল রোজিনার জীবন। ২০২১ সালে রোজিনা তিন মাসের গর্ভবতী থাকা অবস্থায় মারা যায় স্বামী শিপন মণ্ডল। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে পরিবারটি। পেটের সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর দিয়ে দেওয়ার শর্তে প্রতিবেশী পলি আক্তারের কাছ থেকে খাবারের নিশ্চয়তা পায় রোজিনা। জন্মের পর কথামতো নিজের কন্যা শিশুটিকে পলি আক্তারকে দিয়ে দেন। অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় ১১ বছর বয়সী একমাত্র ছেলে আতিকের। তিন বেলা খাবার জোগাড় করাই রোজিনার জন্য পাহাড়সম কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ওই পল্লিতে ৪ শতাংশ জমি রয়েছে রোজিনার। ঘর না থাকায় কোনোরকমে একটি ছাপরা ঘরে বসবাস করছেন রোজিনা ও আতিক। আড়াই বছর আগে স্বামী মারা গেলেও বিধবা কিংবা অন্য কোনো ভাতা না পাওয়ার আক্ষেপ ছিল রোজিনার। পেটের তাগিদে পড়াশোনা বন্ধ করে ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হয়েছিল ১১ বছরের আতিককে। ভিক্ষার উপার্জন দিয়ে দুই তিন দিন পর পর এক দিন চুলোয় হাঁড়ি জ্বলত রোজিনার।
সাইফুল ইসলাম সাইফ রুদাদ/এমজেইউ