মাস্ক পরিয়ে দিচ্ছেন ইউএনও মাসুম রেজা

গত বছর করোনাভাইরাস শুরুর সময় সরকার ঘোষিত লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা, দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো, নিজ হাতে সনাতন ধর্মের মৃত ব্যক্তির শেষকৃত্য সম্পন্ন করা সেই আলোচিত ইউএনও এবারও কঠোরভাবে লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন। ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাসুম রেজা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে তিনি সকাল থেকেই অবস্থান করছেন মহাসড়কে।

দ্বিতীয় ধাপের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার সোমবার (৫ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে এক সপ্তাহের জন্য কঠোর নির্দেশনা ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সারাদেশে এখন চলছে লকডাউন।

সরেজমিনে বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুরের রাজবাড়ী রাস্তার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দেখা যায়, মাসুম রেজা তার সহকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান করছেন। ঘোষিত নির্দেশনা অমান্যকারীদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় ও সচেতন করছেন। যেখানেই মাস্ক ব্যবহার বা সামাজিক দূরত্ব মানা হয় না, সেখানেই ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাচ্ছেন। সেই সঙ্গে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন।

পরে রাজবাড়ী রাস্তার মোড়, মুন্সির বাজার, বাখুন্ডা বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন মো. মাসুম রেজা ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ আল-আমিন। এ সময় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করায় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক পরিধানের গুরুত্ব সম্পর্কে হ্যান্ডমাইকে সবাইকে সচেতন করেন।

ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদক কথা বলেন মো. মাসুম রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, যে হারে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে, তাতে ভয়াবহ অবস্থা অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। আমরা এখনই যদি সচেতন না হই, তাহলে আমাদের অনেক দুঃখ ভোগ করতে হবে।

আপনারা জানেন, সরকার দেশ ও মানুষের মঙ্গলের কথা ভেবে ইতিমধ্যে সাত দিনের কঠোর নির্দেশনা ঘোষণা করেছে। মাঠপর্যায়ে সেটা আমরা বাস্তবায়ন করছি। এটা আমাদের সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্ব। এই অভিযান ১১ এপ্রিল মধ্যে রাত পর্যন্ত অব্যাহত রাখব।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জেলা সদর ও উপজেলা সদরগুলোয় কঠোর নজরদারিতে রেখেছেন। আমরা চেষ্টা করছি বিনা কারণে যাতে কেউ বাইরে বের না হয়। সবাইকে ঘরে থাকার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের লকডাউনে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছিলেন মাসুম রেজা। তার কাজের মধ্যে ছিল করোনাকালীন কেউ মারা গেলে তার দাফন সম্পন্ন করা। একবার হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির মৃত্যুতে যখন তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে বাধা দেয় স্থানীয়রা, তখন তিনি মৃত ব্যক্তির চিতায় নিজ হাতে আগুন ধরিয়ে দাহকাজ সম্পন্ন করেন।

এ ছাড়া হতদরিদ্র মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া। দিন ও রাতে মানুষের খোঁজখবর রাখা। সদর উপজেলার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গিয়ে অনাহারি মানুষের মুখে আহার তুলে দেওয়ার মতো কাজ করেন তিনি।

এ বছর মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিভাগের জেলা পর্যায়ে একজন করে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নির্বাচন করা হয়। তার মধ্যে ফরিদপুর জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হন মাসুম রেজা। ২৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের সম্মেলনকক্ষে তাকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়।

বি কে সিকদার সজল/এনএ