সংঘাত এড়িয়ে প্রকৃত সমাধানে প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা
মহান মুক্তিযুদ্ধের একটি স্বপ্ন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন। কিন্তু সুস্থ ধারার আদর্শভিত্তিক জনকল্যাণমুখী রাজনীতি না থাকায় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির আশঙ্কা বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের কোনো বিকল্প নেই। অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ তথা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের জন্য দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ ও পারস্পরিক সমঝোতা প্রয়োজন। রাজনৈতিক দলগুলোকে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই সমঝোতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ এবং সমঝোতাসূত্র নির্ধারণ করতে হবে। সংলাপ ও সমঝোতা হলেই দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক পরিবেশ তৈরি হবে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর আরডিআরএস ভবনের তিস্তা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ‘রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতা’ শীর্ষক বিভাগীয় কর্মশালায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ভোটার অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড অ্যাকটিভ সিটেজেনারি প্রকল্পের আওতায় দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
বিজ্ঞাপন
এতে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রংপুর জেলার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেনের সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস।
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-বাংলাদেশ এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিলীপ কুমার সরকারের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু, জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব হাজী আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি রংপুর জেলা সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) রংপুর জেলার আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুস, বাংলাদেশ জাসদ রংপুর জেলা সভাপতি গৌতম রায়, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি রংপুর জেলা সম্পাদক কাফি সরকার, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তৌহিদুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
কর্মশালায় বক্তারা বলেন, উন্নয়ন দিয়ে নয় সুশাসন দিয়ে নির্বাচন হয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অসাম্প্রদায়িক বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বৈচিত্র্যের মাঝে ঐক্যের চেতনা বিকশিত করতে হবে। কারও প্রতিপক্ষ নয় কারও লেজুড় নয়, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং নেতাদের হতে হবে জনগণের কণ্ঠস্বর। রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে উদ্যোগী হতে হবে। কারণ সংঘাতে কোনো সমাধান হয়নি বরং ক্ষতি ডেকে এনেছে। তাই সংঘাত এড়িয়ে সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে প্রকৃত সমাধানে রাজনৈতিক দলসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বিরোধিতার নামে বিরোধিতার সংস্কৃতি থেকে রাজনৈতিক দলসমূহকে বেরিয়ে আসতে হবে।
কর্মশালায় রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে সংলাপ ও সমঝোতার লক্ষ্যে ১৫টি প্রস্তাব তুলে ধরে একটি প্রস্তাবিত জাতীয় সনদ উপস্থাপন করা হয়। এ সময় নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনকালে অংশীজনদের ভূমিকা ও নির্বাচন পদ্ধতি, নবনির্বাচিত সরকারের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ, গঠনমূলকভাবে বিরোধীদলের ভূমিকা পালন, রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন, গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ রাজনৈতিক দল, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ন্যায়ভিত্তিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র গঠন, নারীর ক্ষমতায়ন, তরুণদের জন্য বিনিয়োগ, পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন, আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সংকট মোকাবিলা ও জাতীয় সনদ সমুন্নত রাখার কৌশলগত পদ্ধতি, পরামর্শ ও আইনগত ভিত্তি নিয়ে আলোচনা করা হয়।
স্বাগত বক্তব্য দেন রংপুর মহানগর সুজন সভাপতি খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু ও সুজনের রংপুর বিভাগীয় সমন্বয়ক রাজেশ দে। এছাড়া বক্তব্য দেন কারমাইকেল কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভিপি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা আলাউদ্দিন মিয়া, সুজন লালমনিরহাট জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এস এম শফিকুল ইসলাম কানু, সংগীত শিল্পী ও সংগঠক খ.ম আলী সম্রাট, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ্ খান নান্নু, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রংপুর আঞ্চলিক কমিটির সদস্য সচিব রসিদুস সুলতান বাবলু, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন, রংপুর প্রেসক্লাবের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফরহাদুজ্জামান ফারুক।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, চিকিৎসক এবং বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেন। এছাড়া রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা সুজনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ