মহান মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের প্রথম শহিদ শংকু সমজদারের মা দীপালী সমজদার (৮৭) মারা গেছেন। মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে রংপুর নগরীর কামাল কাছনায় নিজ বাড়িতে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।

মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫টায় রংপুর নগরীর দখিগঞ্জ মহাশ্মশানে দীপালী সমজদারের শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন সংগঠন থেকে শহিদ শংকুর মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।

শহিদ শংকু সমজদারের মা দীপালী সমজদারের মৃত্যুতে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, জেলা প্রশাসক, জেলা ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

দীপালী সমজদারের তিন সন্তানের মধ্যে একমাত্র কন্যা ঝর্ণা ব্যানার্জি বেঁচে আছেন। আর যে ভাইয়ের হাত ধরে শংকু সমজদার স্বাধীনতা আন্দোলনের মিছিলে গিয়েছিল, সেই বড় ভাই কুমারেশ সমজদার ২০২১ সালের ৩ জুলাই মারা গেছেন। বাবা ও ভাইদের পর মাকে হারিয়ে শহিদ পরিবারের সদস্য হিসেবে বেঁচে থাকলেন শুধু ঝর্ণা ব্যানার্জি।

প্রসঙ্গত, রংপুর অঞ্চলের প্রথম শহিদ কিশোর শংকু সমজদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পাকিস্তানি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে ডাকা হরতালের পক্ষে শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে সেই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন কিশোর শংকু সমজদার। তার বড় ভাইয়ের হাত ধরে দীপ্ত স্লোগানে মুখরিত মিছিলে তাজা প্রাণ নিয়ে গেলেও শংকু ফিরেছিলেন নিথর দেহে। সেই মিছিলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে শহিদ হন কিশোর শংকু সমজদার।

রংপুর শহরের কৈলাশ রঞ্জন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন শংকু সমজদার। যার সাহস আর আত্মত্যাগ রংপুরবাসীর স্মৃতিতে অমলিন। শংকুর অকাল মৃত্যুতে জ্বলে উঠেছিল বিদ্রোহের আগুন। শোকে কাতর হয়েছিল রংপুর। কেঁদেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে শংকু সমজদারের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে রংপুরের কথা উচ্চারণ করেছিলেন।   

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর