দিন দিন কৃপণ হচ্ছে সাগর, হতাশ উপকূলের জেলেরা
‘সাগরে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়বে রুপালি ইলিশ’ প্রতিবছর ভরা মৌসুমে জেলেরা এই আশায় বুক বাঁধে। তবে এবছর কিছুদিন মাছ জালে আটকা পড়লেও আগস্টের পর আর মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফলে দাদন ও সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে হতাশার জাল থেকে বের হতে পারছেন না জেলেরা।
পটুয়াখালীর উপকূলের জেলেরা বলছেন, সাগর যেন দিন দিন কৃপণ হয়ে যাচ্ছে। ভরা মৌসুমেও সাগরে জাল ফেলে দেখা মিলছে না ইলিশের। এদিকে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবার চলে আসছে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কিন্তু জেলেরা যে আশায় বুক বেঁধেছিল, তা আর হলো না। কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা না পেয়ে তারা হতাশ বলে জানান।
বিজ্ঞাপন
এক জেলে বলেন, আমাদের প্রতিবার সাগরে যেতে তিন থেকে চার লাখ টাকা খরচ হয়। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর ২০ লাখ টাকা খরচ করেছি। মাছ বিক্রি করেছি মাত্র পাঁচ লাখ টাকার। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের এই পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
বিজ্ঞাপন
এভাবেই জেলে এবং সাগরের বর্তমান দূরাবস্থার কথা ঢাকা পোস্টকে জানান এফ ভি আদিল ট্রলারের মাঝি তৈয়ব। স্থানীয় এক মালিকের ট্রলার নিয়ে ২৫ জন স্টাফসহ মাছ শিকার করেন তিনি। চাহিদা অনুযায়ী মাছ না পাওয়ায় পরিবারের ভরণপোষণ পূরণ করতে পারছেন না তৈয়ব।
এফ ভি সামি ট্রলারের জেলে মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈরী আবহাওয়া এবং সমুদ্রে মাছ না হওয়ার প্রভাব শুধু ট্রলার মালিকদের ওপরই পড়ে না। আমাদের ওপর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। আমরা সংসার চালাতে এনজিও থেকে ঋণ নেই সমুদ্রে মাছ শিকার করে শোধ করার আশায়। কিন্তু মাছ না পেলে ঋণ পরিশোধ করব কীভাবে। সংসার চালাতে আমাদের হিমশিম খেতে হয়।
মিজানুর রহমান বলেন, ‘সরকার জেলেদের অনেক সহযোগিতা করে। কিন্তু প্রকৃত জেলেদের কাছে এই সহযোগিতা পৌঁছায় না। তাই আমাদের দাবি, সরকার যেন এই জেলে পেশাটাকে টিকিয়ে রাখতে গুরুত্ব সহকারে নজর দেয়। তবে এটা সত্য যে জেলেদের জন্য অনেক বরাদ্দ আসে। কিন্তু সেটা সত্যিকারের জেলেদের পর্যন্ত এসে পৌঁছায় না। সরকারের দেওয়া বরাদ্দগুলো যদি আমাদের পর্যন্ত এসে পৌঁছতো তাহলে আমরা পরিবার নিয়ে ভালো থাকতে পারতাম।
মহিপুর বন্দর মৎস্য আড়ৎ ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ রাজা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই চাহিদা অনুযায়ী ইলিশ মেলেনি সাগরে। ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরপরই ধারাবাহিকভাবে ছিল বৈরী আবহাওয়া। বাকি সময়টা সমুদ্রে জেলেরা গেলেও পায়নি কাঙ্ক্ষিত রুপালি ইলিশের দেখা। তাই জেলে এবং ব্যবসায়ীদের মাঝে কিছুটা হতাশা দেখা দিয়েছে।
এসএম আলমাস/আরকে