চট্টগ্রামের আস্তানা নগর এলাকার আবুল কালামের ছেলে মো. আবু জাহের (৩৩)। তিনি দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন কারারক্ষী হিসেবে। ২০১৯ সালে স্ত্রীর দায়ের করা নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি মামলায় চাকরিচ্যুত হন আবু জাহের। এরপর প্রতারণাকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। 

এতদিন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সিল জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে  
নিতেন আবু জাহের। দেশের বিভিন্ন স্থানের জনপ্রতিনিধিদের ফাঁদে ফেলতেন তিনি।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ফেনীর পুলিশ সুপার মুহাম্মদ শরীফুল ইসলাম। 

পুলিশ সুপার জানান, আবু জাহেরের প্রতারণার প্রধান টার্গেট ছিল দেশের বিভিন্ন স্থানের দুর্বল প্রকৃতির জনপ্রতিনিধিরা। যাদের আলোচিত ভিডিও বা কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডের তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জড়িয়ে পড়ত এমন ব্যক্তিদের দুর্বলতার সুযোগ নিতো সে।

তিনি আরও জানান, সম্প্রতি ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য একরামুল হকের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে নিজেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয় আবু জাহের। আলাপকালে ইউপি সদস্যকে ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের বিশেষ কিছু প্রকল্প বরাদ্দ দেবে বলে প্রলুব্ধ করে। তার কথায় আশ্বস্ত হয়ে সেদিনই বিকাশের মাধ্যমে ২৫ হাজার টাকা পাঠায় ভুক্তভোগী সদস্য। এভাবে ওই ইউপি সদস্যের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করত আবু জাহের। পরবর্তী চলতি মাসের ১০ তারিখ নিজ ওয়ার্ডের অনুকূলে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরিত প্রায় ৮০ লাখ টাকার প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রশাসনিক একটি অনুমোদনপত্র ডাকযোগে পাঠায় আবু জাহের। ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য বিষয়টি বিশ্বাস করে তার কথামতো বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে আবারও ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা পাঠায়। টাকা দেওয়ার কয়েক দিন পর বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হলে ইউপি সদস্য আবু জাহেরের পাঠানো প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রশাসনিক অনুমোদন পত্রটি ফেনী স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেনের কাছে উপস্থাপন করে। তখনই তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে বুঝতে পারেন।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভুক্তভোগী ধর্মপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য একরামুল হক বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফেনী পিবিআই এর উপ-পরিদর্শক মো. মোরশেদ আলমের নেতৃত্বে একটি টিম কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেন। 

গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে এই অপরাধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন সিলমোহর, নগদ ১৬ হাজার টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। 

পুলিশ সুপার জানান, আবু জাহের এভাবে দেশের অনেক ইউপি চেয়ারম্যান এবং সদস্যকে এ ধরনের প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন তিনি। আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ফেনী পিবিআই এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তারেক চৌধুরী/আরকে