যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে গত সাড়ে তিন মাস আগে চালু হয়েছে বৈকালিক চিকিৎসাসেবা। কিন্তু এখনো প্রচারণার অভাবে সেবাগ্রহীতারা অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সেবা নিচ্ছেন বাইরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে। এ বিষয়ে হাসপাতালের প্রবেশপথে নেই কোনো ব্যানার-ফেস্টুন। মাইকিং করেও জানানো হয়নি এলাকাবাসীকে।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর-রশিদ জানান, প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৪২ জন চিকিৎসক সরকার নির্ধারিত মূল্যে চিকিৎসা ও রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ স্বল্পমূল্যে সেবা দিয়ে আসছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে পর্যায়ক্রমে ৪২ জন চিকিৎসক চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। এরমধ্যে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ছিলেন ছয়জন, নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ একজন, নেফ্রোলজি বিশেষজ্ঞ একজন, কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ তিনজন, রিওমাটোলজি বিশেষজ্ঞ একজন, সাইকিয়াট্রি বিশেষজ্ঞ একজন, অর্থো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ তিনজন, সার্জারি বিশেষজ্ঞ চারজন, নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ তিনজন, সাতজন গাইনি বিশেষজ্ঞ, শিশু বিশেষজ্ঞ ছয়জন এবং চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ছয়জন চিকিৎসক।

হাসপাতালের তথ্যমতে, বৈকালিক চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রতিদিন পাঁচটি বিভাগের পর্যায়ক্রমে পাঁচজন চিকিৎসক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তবে প্রচার প্রচারণার অভাবে অধিকাংশ রোগী এই সেবা কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারছেন না।

শনিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পাঁচজনের মধ্যে চারজন চিকিৎসক মিলে মাত্র ১২ জন রোগী দেখেছেন। তাদের মধ্যে অর্থো-সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আ.ন.ম বজলুর রশীদ, সিনিয়র কনসালটেন্ট (চর্ম ও যৌন) ডা. শফিউল্লাহ সবুজ ও শিশু বিশেষজ্ঞ ইনামুল কবির রোগী দেখেছেন দুইজন করে। আর গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. তাহরিমা খানম ছয়জন রোগী দেখেছেন। গত বুধবারে রোগী সেবা নিয়েছেন মোট ২৩ জন। গত মঙ্গলবার রোগী এসেছিল ২০ জন। ওই দিনও দুইটি ওটি হয়েছিল বৈকালিক চিকিৎসার আওতায়। 

শনিবার সরজমিনে যশোর জেনারেল হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বৈকালিক সেবা চালুর এতোদিন পরেও তেমন প্রচার না থাকায় রোগীর চাপ নেই। একই সময়ে বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে রোগীদের ভিড়। অথচ সরকারি হাসপাতালের বৈকালিক চেম্বারে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা অলস সময় পার করছেন। অনেক চিকিৎসক ওই সময়টায় প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখছেন। রোগী এলে সহকারীরা ফোন দিয়ে ডেকে আনছেন দায়িত্বরত চিকিৎসককে।

বৈকালিক চিকিৎসা কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা শহরের বকচর এলাকার আব্দুর রহিমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বেশ কিছু কারণে রোগী কম যায়। সকালে যে ডাক্তারের কাছে ১০ টাকা ভিজিটে সেবা নেওয়া যায়, বিকেলে সেই ডাক্তারের কাছে তিনশ টাকা দিয়ে সেবা নিতে হয়। তাছাড়া সকালে সেবা নিলে ওষুধ পাওয়া যায়, কিন্তু বিকেলে তিনশ টাকা ভিজিটে শুধু সেবা মেলে।

বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন মুরছালিন আহম্মেদ বলেন, আমি বাঘারপাড়া থেকে এসেছি। অসুস্থ বোনকে বেসরকারি একটি ক্লিনিকে ডাক্তার দেখিয়েছি। হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবার বিষয় আমার জানা নেই। আপনাদের মাধ্যমেই জানলাম। আগে জানলে চিকিৎসা খরচ অনেকটা কম লাগত। 

একই রকম বক্তব্য দেন বেশ কয়েকজন রোগীর স্বজনদের। তারা বলেন, আমরা তো মাঝে মধ্যেই সদর হাসপাতালে যায়। বৈকালিক চিকিৎসা সেবার বিষয়ে কোনো কিছু জানা নেই। রিপোর্টারের কাছে জানলাম সরকার নির্ধারিত স্বল্প মূল্যে চিকিৎসা ও রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ খোলা থাকে। 

বিষয়টি জানতে পেরে অনেকে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, হাসপাতালেও নেই কোনো ব্যানার-ফেস্টুন। তাহলে আমরা জানবো কি করে। অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সেবা নিতে হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতালে। কমপক্ষে মাইকিং করে জানানো উচিত বলে মনে করছেন বেসরকারি হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনেরা।

হাসপাতালের তত্ত্বাধায়ক ডা. হারুন অর রশীদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করার জন্য প্রতিদিন ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আমরা বৈকালিক স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। 

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস বলেন, আমরা আগে মাইকিং করেছিলাম। সাংবাদিকদের মাধ্যমেও জনগণকে জানিয়েছি। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বড় পরিসরে প্রচারে যেতে পারছি না।

এ্যান্টনি দাস অপু/আরকে