তিস্তার পানি বৃদ্ধি, পাউবোর ৫ জেলার সব কর্মকর্তার ছুটি বাতিল
ভারতের উত্তর সিকিমে প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কারণে তিস্তা নদীর একটি বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশের তিস্তার তীরবর্তী উত্তরের ৫ জেলায় বন্যার আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এরই মধ্যে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কর্মরত সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের কর্মস্থল ত্যাগ করা যাবে না বলেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে পাউবো পরিচালক (বোর্ড) ওবায়দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধার তিস্তা এলাকাগুলোতে কর্মরত ও কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকা অপরিহার্য। বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাউবোর সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ দপ্তর বা কর্মস্থল ত্যাগ না করা নির্দেশ দেওয়া হলো।
বিজ্ঞাপন
পাউবোর আরেক আদেশে বলা হয়েছে, বন্যা মনিটরিং ও বন্যাকালীন জরুরি যোগাযোগের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে একটি কন্ট্রোল রুম (০১৫৫২৩৫৩৪৩৩ ও ০১৭৮৭৬৯৪৭৮৮) নম্বর খোলা হয়েছে। দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের দায়িত্বে এই কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যেকোনো জরুরি তথ্যের জন্য কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৪ অক্টোবর) রাত ১১টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৯২ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)।
এর আগে বিকেল ৪টায় তিস্তার পানি এই পয়েন্টে ০৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বিকেল ৫টায় তা বেড়ে ১০ সেন্টিমিটার ও সন্ধ্যা ৬টায় ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। রাত ৭টা ও ৮টায় পানি বেড়ে ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও রাত ৯টায় পানি কমে বিপৎসীমার ০৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এরপর রাত ১০টা থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ আরও কমতে শুরু করেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ডালিয়া পয়েন্টের পানি সমতল আগামী ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হ্রাস পেয়ে পরবর্তীতে পুনরায় বৃদ্ধি পেতে পারে।
আরও পড়ুন
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধিতে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী বিভিন্ন এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। নিম্নাঞ্চলে এরই মধ্যে পানি প্রবেশ করেছে। চরাঞ্চলেও পানিতে ডুবেছে বাড়ি-ঘর ও রাস্তা ঘাট। এতে তিস্তা তীরবর্তী মানুষজন ঘরবাড়িসহ গবাদি পশু নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বিদ্যালয় ও আশ্রয়কেন্দ্রে। ভারতীয় ঢলে তিস্তা নদীর পানি দ্রুত বাড়ায় রংপুর অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। রাতের মধ্যে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহের আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ফলে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করছে প্রশাসন।
এদিকে বুধবার সকাল থেকে বৃষ্টির ফলে আগাম জাতের আমন ধান তিস্তার চরে কেটে রাখায় বিপাকে পড়েছে মানুষ। বন্যার খবর শোনার পর থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে কেটে রাখা ধান চর থেকে সরিয়ে নিচ্ছে চাষিরা। পাশাপাশি কাটতে না পারা আমন ধান খেত পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।
নদীপাড়ের মানুষেরা জানান, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে তিস্তা নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। বন্যা শঙ্কায় চিন্তিত তারা। চলতি মৌসুমে কয়েক দফায় বন্যা হলেও তা বেশি সময় স্থায়ী ছিল না। মৌসুমের শেষ দিকে বড় বন্যার আশঙ্কাও করছেন তারা।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে ভারী বর্ষণের কারণে তিস্তাসহ আশপাশের নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাইকিং করে সতর্কতা জারি করে নিম্নাঞ্চলের মানুষকে নিরাপদস্থানে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা মানুষকে সচেতন করছি। কোথাও কোনো সমস্যা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড তা মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে।
শরিফুল ইসলাম/এএএ